ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, হামলার আশঙ্কা

অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট, হামলার আশঙ্কা

ফাইল ছবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ | ২০:৫৩ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ | ২০:৫৩

ময়মনসিংহে এক সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট। রমজান মাসে ইফতার, তারাবি কিংবা সেহরির সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। এ নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য সরকারি দপ্তর, কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ সদর (আংশিক), গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত কম। অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তীব্র গরমে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আঞ্চলিক দপ্তর ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে নির্দিষ্ট এলাকায় দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। এ কারণে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধীনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। ময়মনসিংহ, জামালপুর ও টাঙ্গাইলে সাতটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। প্রায় ১২ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা দিনে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট এবং রাতে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি থেকে পিডিবি শিডিউলের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎকেও বিদ্যুৎ বিতরণ করে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে জামালপুরের শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটি পারিবারিক বিরোধে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ইউনাইটেড জামালপুর নামের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৩১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার। তবে সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটে উৎপাদন কমে গেছে প্রতিষ্ঠানটির। এ ছাড়া ময়মনসিংহ নগরীর শম্ভুগঞ্জ এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ-সংলগ্ন রুরাল পাওয়ার কোম্পানির (আরপিসিএল) বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। গ্যাস সংকটের কারণে ২০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ময়মনসিংহের সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে গড়ে ৩ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। টাঙ্গাইলের ডরিন পাওয়ার জেনারেশন এবং পল্লী পাওয়ার নামের ৪৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩৪ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে আশুগঞ্জ ও কালিয়াকৈর থেকে। অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ১৩২ কেভি দীর্ঘ সরবরাহ লাইনের কারণে গ্রাহক প্রান্তে লো-ভোল্টেজ হচ্ছে। এতেও বাড়ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। 

তীব্র গরম আর বিদ্যুৎ বিভ্রাটে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। ময়মনসিংহ নগরী সেহরা এলাকার বাসিন্দা উবায়দুল হক বলেন, সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ থাকে না। তারাবিও পড়া যাচ্ছে না গরমে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট বেগতিক। 

ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাট অসহনীয়। তীব্র গরমে তার পাঁচ মাসের শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখনও কোথাও হামলা হয়নি। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে পরবর্তী ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

পাওয়ার গ্রিড অব কোম্পানি (পিজিসিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল হকের ভাষ্য, বর্তমানে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন সমস্যা হচ্ছে। গ্যাস ও জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে। 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, রাত-দিন মিলে গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদন ঠিক রাখতে পিডিবির কিছু বিদ্যুৎ শহর থেকে পল্লী বিদ্যুৎকে দেওয়া হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ যা-ই বলুক, আমাদের নথিভুক্ত চিত্র এটি। সরকার পরিস্থিতি উত্তরণে চেষ্টা করছে। আশা করছি, ঈদের ছুটিতে আগামী সাতদিন ভালো থাকব।’

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা জানান, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে কেউ যাতে নাশকতা বা ষড়যন্ত্র করতে না পারে। বিষয়টি নিয়ে সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ যেন আগে থেকেই জানিয়ে দেয় কোন এলাকায় কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।


আরও পড়ুন

×