পানি উঠছে না নলকূপে, প্রাদুর্ভাব আর্সেনিকের

আহমেদ রাজু, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ | ০৫:৪৭
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রায় ৫০ ভাগ অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। তীব্র তাপদাহের কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে উপজেলাবাসী।
ভূগর্ভস্থ পানি সংকটের পাশাপাশি অনেক এলাকায় আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এখানকার প্রায় শতভাগ মানুষই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, দৌলতপুরের প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েল বা অগভীর নলকূপ এবং প্রায় সাড়ে ৬ হাজার গভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলিত পানি খাওয়াসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকেন এলাকার মানুষ। চাষাবাদের জন্যও ভূগর্ভস্থ পানি কৃষকদের একমাত্র ভরসা।
গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে নলকূপ দিয়ে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা পানি কম পাওয়া গেলেও তেমন সমস্যা হয়নি। কিন্তু এ বছর ভূগর্ভস্থ পানির বেশ সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের প্রায় ৫০ ভাগ নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক চাপাচাপির পর এসব নলকূপ দিয়ে স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ ভাগও পানি তোলা যাচ্ছে না। এই সামান্য পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটছে না। সাধারণ মোটর (সাবমার্সিবল ব্যতীত) দিয়ে যাঁরা পানি উত্তোলন করে থাকেন, তাঁদের অবস্থা আরও করুণ। টিউবওয়েল দিয়ে সামান্য কিছু পানি উঠানো গেলেও প্রায় ৯০ ভাগ সাধারণ মোটর দিয়ে পানি তোলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া শতকরা ৫-৮ ভাগ নলকূপ একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার মথুরাপুর, প্রাগপুর, আদাবাড়িয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে নলকূপে পানি সংকটের পাশাপাশি আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পানি সংকটের কারণে গ্রামের মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানিই পান করছেন।
মথুরাপুর ইউনিয়নের শালিমপুর গ্রামের আল আমিন রিন্টু বলেন, টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটর লাগিয়ে তিনি পানি উত্তোলন করেন। পাইপে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। মোটর চালু করে দুই থেকে এক মিনিট পানি উঠানোর পর আর পানি উঠছে না। ১০-১৫ মিনিট চেষ্টার পর সামান্য কিছু পানি ওঠে।
একই ইউনিয়নের বাগোয়ান গ্রামের আকরাম হোসেনের ভাষ্য, তাঁদের গ্রামের বেশ কয়েকটি টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক ধরা পড়েছে। আর্সেনিকের নানা লক্ষণ থাকার পরও গ্রামের মানুষ সচেতন না হওয়ায় ওই পানিই পান করছেন।
আদাবাড়িয়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর টিউবওয়েলটি অকেজো। টিউবওয়েলের পাইপে কোনো পানি থাকে না। অনেক চেষ্টা করেও পানি তোলা যাচ্ছে না।
খাস মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোয়ার কবির মিন্টু বলেন, গ্রামের অধিকাংশ টিউবওয়েলে ভূগর্ভস্থ পানি উঠছে না। পানি সংকটের পাশাপাশি তাঁর ইউনিয়নে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তুলে ধরা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মানুষের বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী খাদিমুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কিছুটা নিচে চলে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। বর্ষা শুরু হলে নলকূপগুলো ফের স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আর্সেনিক বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, পানি পরীক্ষার মাধ্যমে আর্সেনিকযুক্ত নলকূপগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো ব্যবহার না করতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।