দরগ্রাম-সাটুরিয়া সড়ক
কার্পেটিং উঠিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার
-copy-samakal-648cb4558d17d.jpg)
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দরগ্রাম-সাটুরিয়া সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। সম্প্রতি রহুলি কুষ্টিয়া গ্রাম থেকে তোলা ছবি-সমকাল
মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম-সাটুরিয়া সড়ক সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। আবার কয়েক দিন রোদ পড়লেই আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে ধুলাবালি। এভাবেই দুর্ভোগ নিয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করছে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, রিকশা, হ্যালোবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এসব যানবাহনে করে আশপাশের ২৫ গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। সড়কটি মেরামতের জন্য ৮ কিলোমিটার এলাকা থেকে কার্পেটিং তোলার প্রায় দুই বছর হতে চলেছে। তবে অর্থাভাবে সেই কাজ থমকে আছে।
সড়কটির এ করুণ দশার জন্য এলাকার লোকজন দায়ী করছেন ড্রাম ট্রাকে করে অবৈধভাবে বালু ও মাটি বহনকারী ব্যক্তিদের। তাঁরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দিয়ে দিনরাত চলাচল করে এসব ভারী যানবাহন। চালকদের বেপরোয়া চালানোর কারণে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে নানা আকারের হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে চলে যাওয়ায় অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
জানা গেছে, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি দরগ্রাম, গোপালপুর ও বাংলাদেশহাট হয়ে মানিকগঞ্জ এবং টাঙ্গাইলের নাগরপুরগামী সড়কে মিশেছে। বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক থাকায় এখান দিয়ে ঘিওর, হরগজ, শিমুলিয়া, তিল্লি, গোপালপুর, বরাইদসহ ২৫ গ্রামের মানুষকে চলাচল করতে হয়। ওই সড়কের পাশেই রয়েছে উপজেলার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন ৫-৬ হাজার শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেকেই ধুলার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হারও কমে গেছে।
সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মরিরুজ্জামান মুক্তি বলেন, এ সড়কটি উপজেলাবাসীর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বৃষ্টির সময় কাদায় শিক্ষার্থীর পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। রোদের সময় চলাচলে নাক-মুখ দিয়ে ধুলাবালি ও ইটের গুঁড়া ঢোকে।
সাটুরিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, দরগ্রাম-সাটুরিয়া সড়কের প্রশস্তকরণ ও কার্পেটিংয়ের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ২০ টাকা। মানিকগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন কনস্ট্রাকশন দায়িত্ব পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইয়ে কাজ শুরু করে। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে অর্থ সংকটে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে চলে গেছে। যে কারণে সড়কের কার্পেটিং ওঠানোর পর আর কোনো কাজই হয়নি।
হোসাইন কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক বৃন্দাবন মণ্ডল বলেন, পুরো সড়কে সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে চারটি বিল দাখিল করেন তাঁরা। তিনটি বিলে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা পেয়েছেন। কাজ বন্ধের জন্য বরাদ্দের অভাব ও নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন তিনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনটি বিল পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন উপজেলা উপপ্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেনও।
দরগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলিনুর বকস রতন বলেন, দরগ্রামসহ ২৫ গ্রামের মানুষ এখন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন না। বিকল্প সড়ক দিয়েই তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যান।
বেহাল এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায়ও কথা বলেছেন। এর পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।
সাটুরিয়া থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস বলেন, ওই সড়ক ছাড়া হরগজ, তিল্লি, দরগ্রাম ও বরাইদ ইউনিয়নে যাওয়ার অন্য উপায় নেই। এসব এলাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটলে সড়কের কারণে পুলিশ সময়মতো পৌঁছাতে পারে না।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. নাজমুল করিম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটির কাজ বন্ধ করার পর অনেক চিঠি চালাচালি করেছি। তার পরও তারা কাজ করছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। এতেও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।’
- বিষয় :
- দরগ্রাম-সাটুরিয়া সড়ক
- কার্পেটিং
- ঠিকাদার
- সাটুরিয়া