ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

দুই বছরের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও

দুই বছরের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও

বেলাল হোসেন জুয়েল, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলায় রামগতিতে ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও। এতে এসব বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

জানা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা কাঠ ও টিনের শ্রেণিকক্ষগুলোতে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব বিদ্যালয়ের অফিস ও শ্রেণিকক্ষগুলোর থাকছে না নিরাপত্তাও। অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষগুলো আসন্ন বর্ষায় কিংবা ঝোড়ো বাতাসে ধসে পড়ে দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় বহুমুখী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘নাভানা কনস্ট্রাকশন’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উপজেলার ১০টি বিদ্যালয়ের তিন তলাবিশিষ্ট ভবন কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করে। বিদ্যালয়গুলো হলো– পশ্চিম চরসীতা হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হারুন মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকলাকোপা নোমানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপোড়াগাছা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য চরসেকান্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলেকজান্ডার বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য চরআফজল-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য পূর্ব আলেকজান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরমেহার মাস্টারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে এসব ভবন নির্মাণের সময়সীমা ধরা হয়েছে দুই বছর। শর্ত অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

চলতি মাসের ৯ তারিখ এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পাঁচটির তিনতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া দুটির একতলা এবং তিনটি বিদ্যালয়ের প্রথম তলার পিলার দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের উপকরণ পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়।

দু-তিনটি ভবনে দেখভালের নামে নামমাত্র কাজ করেছেন এক-দু’জন শ্রমিক। ছাদ ঢালাই এবং দু-একটি কক্ষের ইট গাঁথুনি দিয়ে রাখা এসব ভবন দীর্ঘ সময় ধরে খোলামেলা পড়ে থাকায় আড্ডা দিচ্ছে বখাটেরা। রাতের বেলায় বসে মাদকসেবীদের আসর। এ ছাড়া যেখানে সেখানে ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে।

চরগাজী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার উদ্দীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণসামগ্রী মাঠে ফেলে রাখায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। রডগুলোতে জং ধরে মান নষ্ট হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান (চলতি দায়িত্ব) বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার বলেছেন যেন দ্রুত ভবনগুলোর কাজ শেষ করা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই এ ভবনগুলোর পুরোদমে কাজ শুরু হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ইতোমধ্যে কিছু ভবনের কাজ পুনরায় শুরু করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজও শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন

×