বন্দোবস্তের ভূমিতে মাছ চাষ করে বিপদে ভূমিহীনরা

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
ভুক্তভোগীরা বলছেন, উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া খাস জমিতে মাছ চাষ করলেও আব্দুল কাদেরের কারণে ধরতে পারছেন না তাঁরা। পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করা সুন্দরবনের এক দস্যুর ৯০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে বিলাসবহুল বাড়ি করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধ। একটি হত্যা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রমও চলছে।
বুধবার সরেজমিনে আমড়াতলা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদ পান আব্দুল কাদের। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখল, মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ আসতে থাকে। ভূমিহীন রিনা বেগম বলেন, খাস জমিতে মাছ চাষ করলেও আব্দুল কাদেরের লোকজন তা লুট করে নিয়ে গেছে।
আরেক ভূমিহীন জামিল ফকিরের চাচাতো ভাই আব্দুল কাদের। তিনি উপজেলা প্রশাসন থেকে জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার পর তাঁর ওপরও নির্যাতন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন। তাঁর ভাষ্য, ভূমিহীনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন। পাঁচ কাঠা করে জমি দিয়ে মাছ চাষ করে সংসার চালানোর ব্যবস্থা করেছে সরকার। তাঁদের অপরাধ কোথায়, এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
এ সময় নির্যাতন ও মামলার কথা বলে কেঁদে ফেলেন মান্নান ফকির। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, আব্দুল কাদেরের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। কথার অবাধ্য হলেই এ বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন চালান। এক পর্যায়ে তাঁরা সাংবাদিকদের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। ভূমিহীন ১২ জন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা এ মামলার আসামি।
আত্মসমর্পণকারী গোলাম রসুল ফকির ছিলেন সুন্দরবনের বনদস্যু গামা বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড। তিনি অভিযোগ করেন, আত্মসমর্পণের আগে দুই দফায় ৯০ লাখ টাকা আব্দুল কাদেরের কাছে রাখেন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে টাকা ফেরত চাইলে তিনি দিতে অস্বীকার করেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন সরকারি খাস জমিতে মাছ চাষ করেছেন আব্দুল কাদের। উপজেলা প্রশাসন এসব জমিতে ভূমিহীনদের মাছ চাষের অনুমতি দিলে ক্ষুব্ধ হন তিনি। আব্দুল কাদেরের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু তাহের হাওলাদারও।
এ নেতার ভাষ্য, সোনাইলতলা ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রী নাজরিনা বেগমের কাছে ভুয়া ওয়ারিশ কাম সার্টিফিকেট চান তিনি। কিন্তু চেয়ারম্যান ভুয়া নামের সনদ না দিলে ক্ষুব্ধ হন আব্দুল কাদের। ভূমিহীনদের খাস জমি বরাদ্দে উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আরও ক্ষিপ্ত হন তিনি। এখন ঘেরের মাছ লুট ও হুমকি-ধমকির প্রচার করছেন।
আব্দুল কাদের সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খাস জমিতে মাছ চাষকারীরা তাঁর ৭৫ বিঘা জমির চিংড়ি ঘের থেকে মাছ চুরি করায় মামলা করেছেন। সুন্দরবনের দস্যুদের সঙ্গেও কখনও সম্পর্ক ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর দাশ বলেন, আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ ও খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া ভূমিহীনদের হয়রানির বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।