কুড়িগ্রামে কমছে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি

বসতভিটা তলিয়ে যাওয়ায় মা ও বোনকে নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছেন রেখা মণি। শুক্রবার কুড়িগ্রামে বামনডাঙ্গার চর তেলেরকুটির ছবি-সমকাল
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩ | ১৮:০০
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি গতকাল শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে। স্থিতিশীল রয়েছে ধরলা নদী এবং দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদের পানি। আগামী দুই সপ্তাহে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে এখনও পানিবন্দি জেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু স্থানে অবস্থান করলেও, শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন। এতে বন্যাকবলিতদের ভোগান্তি বেড়েছে।
পাউবো জানায়, শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী সদর পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ৯১ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদ নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটারও চিলমারী পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের মশালের চরের বাসিন্দা হামিদুল জানান, পানি কমতে শুরু করেছে। এবার হয়তো বন্যা হবে না। তবে এর পর পানি এলে বন্যা হতে পারে।
এদিকে নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমার নদের পানি টানা চার দিন বেড়ে শুক্রবার সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দি। টিউবওয়েল পানির নিচে থাকায় খাবার পানির তীব্র সংকটে বাসিন্দারা। চুলা জ্বালাতে না পারায় খাবার সংকটে তাঁরা।
গতকাল দুপুরে দুধকুমার নদের চর দামাল গ্রামের নুরনাহার বেগম বলেন, ‘ভুরাত (ভেলা) দুই দিন রান্দি খাইছি বাহে। আজ (শুক্র) সারাদিন অনাহার। প্রতিবন্ধী বাচ্চাটাক নিয়া খুব অসুবিধায় আছি। চলাফেরা করা খুব কষ্ট হইয়া গেইছে।’
নুরনাহারের মতো দুধকুমার পারের রায়গঞ্জ ও বামনডাঙ্গার দামালগ্রাম, কুটিরচর, ফান্দের চর, তেলেরকুটিচরসহ আশপাশের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ এভাবেই কষ্টে দিন পার করছেন। চরদামাল গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, ঘরের ভেতর পানি। তাই পাশের মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার ভাত খেয়েছেন।
বামনডাঙ্গার কুটির চরের বাসিন্দা আঞ্জুরা বেগম বলেন, ‘হামার সোগ (সব) বানের পানিত গেইছে। আমার স্বামী মানষের নৌকাত থাকে, আমি পাশের বাড়িত উঁচু ভিটাত থাকি।’
বামনডাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, এই ইউনিয়ন সম্পূর্ণ চরের ওপর। এখানকার দেড় হাজার মানুষ পানিবন্দি। সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি।
রায়গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আরিফুজ্জামান বলেন, দুইশ পরিবার পানিবন্দি। এসব পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ খাবারের কষ্টে আছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন, পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে। এখানে আসলে সেভাবে কেউ পানিবন্দি নেই। খোঁজখবর নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
পাউবো কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বন্যা সতর্কীকরণের পূর্বাভাস অনুযায়ী শনি ও রোববার থেকে সমতলে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, এখনও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। যেভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে, সেটা স্বাভাবিক। এটাকে পানিবন্দি বলা চলে না। দুই-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
- বিষয় :
- কুড়িগ্রাম
- ব্রহ্মপুত্র
- তিস্তা