ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

তদারকি নেই, মরিচের বাজারে সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী

তদারকি নেই, মরিচের বাজারে সুবিধা নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

সপ্তাহ ব্যবধানে মানিকগঞ্জে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ১৮০ টাকা। দুই দিন ধরে চাষিরা পাইকারি কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজি দরে। সেই মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা দরে। এতে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা ঢুকছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। তাপদাহে মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ী ও চাষিরা। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যকে মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

জেলা‌ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর মানিকগঞ্জে ৩ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে শীতকালীন কাঁচামরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে চাষ হয় ৩ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫০ হেক্টর বেশি। জেলার সাত উপজেলার মধ্যে শিবালয়, হরিরামপুর ও ঘিওরে মরিচের চাষ বেশি। এসব মরিচ রোপণ করা হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে, ফলন দেয় জুলাই পর্যন্ত।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাঁচামরিচের গাছগুলোর সবুজ পাতা থুবরা হয়ে গেছে। যেসব গাছ ভালো আছে তাতেও ফলন নেই। মরিচের ফুল আসার পরপরই তা ঝরে যাচ্ছে।

হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা গ্রামের কৃষক রহিম শেখ জানান, ৪৫ শতাংশ জমিতে কাঁচামরিচের চাষ করেছেন তিনি। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের অর্ধেক পর্যন্ত উৎপাদন ভালোই হয়েছে। এরপর প্রচণ্ড তাপের কারণে মরিচ গাছের পাতা থুবরা হয়ে যায় ও ফুল ঝরে পড়ে। আগে এক দিন পর পর ১৫ কেজি করে মরিচ তোলা যেত। এক সপ্তাহ ধরে দুই-আড়াই কেজির বেশি মরিচ তোলা যাচ্ছে না। এখন ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে।

শিবালয় উপজেলার বরংগাইল গ্রামের কৃষক মোমিন উদ্দিন বলেন, মরিচের দাম বেড়েছে এটা দেখলেন, মরিচ যে ধরছে না সেটাতো দেখছেন না। আগে এক কেজি মরিচ উত্তোলন করতে শ্রমিকের মজুরি ছিল ১৫ টাকা। এক সপ্তাহ ধরে শ্রমিকের মজুরি দিতে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা। উৎপাদন না হওয়ায় সেভাবে লাভ হচ্ছে না।

হরিরামপুর উপজেলার গোড়াইল গ্রামের কৃষক সোরহাব ব্যাপারী বলেন, ‘সাড়ে তিন বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করছি। সোমবার ছয় কেজি মরিচ তুলছি। ঝিটকা বাজারে আড়াইশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। গাছ মরে যাচ্ছে, ফলন হচ্ছে না। অনেক লোকসান হলো এবার।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজারের আড়তদার সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এখন আড়তে মরিচ আসছে না। আগে যে কৃষক ২০ কেজি মরিচ নিয়ে আড়তে আসতেন সেই কৃষক এখন তিন-চার কেজি করে মরিচ নিয়ে আসেন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় হঠাৎ মরিচের দাম বেড়ে গেছে।

গত সোমবার ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে ১০০ কেজি মরিচ কিনেছেন পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজ মোল্লা। এই মরিচ সাতক্ষীরায় পাঠাবেন। কিন্তু এত অল্প মরিচ কিনে সেখানে পাঠাতে যে খরচ হয় তাতে পোষায় না। দাম তো এভাবেই বেড়ে যাচ্ছে। এরপর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গড়ে ২৭০ টাকা দরে ২০ কেজি মরিচ কিনেছেন তিনি। এই মরিচ ঢাকায় পাঠাতে যে খরচ হবে, তাতে প্রতি কেজির দাম পড়বে ৩৪০ টাকার ওপরে।

মানিকগঞ্জ হিজুলী বাজারের ক্রেতা চন্ডি চক্রবর্তী বলেন, ‘চার দিন আগে ২০০ টাকা দরে কাঁচামরিচ কিনেছি। আজ (মঙ্গলবার) বাজারের মরিচের দাম চাচ্ছে ৩৬০ টাকা কেজি।’

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু জানান, উৎপাদন কমে গেলে দাম বেড়ে যায়– এটা স্বাভাবিক। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের শতকরা ১০ টাকার বেশি পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে শতকরা ২৫ টাকার বেশি দিয়ে মরিচ কিনছেন ক্রেতারা। বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে সুবিধা নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

জেলা‌ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মরিচ আবাদ বেশি হলেও ফলন হয়েছে ৭০ ভাগ। অতিরিক্ত তাপে ও খরায় মরিচ গাছ থুবরা হয়ে গেছে। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। তাঁর আশা, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মরিচের দাম কমবে। কারণ গ্রীষ্মকালীন গাছে মরিচ ধরতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন

×