ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কাফনের কাপড়ে মায়ের অনশন

প্রধানমন্ত্রীর কাছে একমাত্র ছেলে তাজু হত্যার বিচার চেয়ে অসহায় মা লাইলী বেগম রোববার ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সামনে ফুল্লরা চত্বরে কাফনের কাপড় পরে অনশন করেন - সমকাল
ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
গতকাল রোববার সকালে ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনশনে বসেন বাদী লাইলী বেগম। তাঁর অনশন ভাঙানোর অনেক চেষ্টা করেছেন স্থানীয় অনেকেই, কিন্তু কাজ হয়নি। বিকেলে ছুটে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. নাহিদুল করিম। লাইলী বেগমকে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আগামী বুধবার দেখা করিয়ে মামলার সুষ্ঠু তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। এরপর অনশন ভাঙেন এই নারী।
তাজুল ইসলাম (২০) কুশমাইল ইউনিয়নের বরুকা তালতলা গ্রামের মৃত ছফির উদ্দিনের ছেলে। তাদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ একই গ্রামের নজরুল ইসলাম গংদের। এর জেরে ২০১৭ সালের জুন মাসে পুকুরে বিষ ঢেলে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ নিধন করে দুর্বৃত্তরা। মাঝেমধ্যে তাজুলকে হত্যা করার হুমকি-ধমকি দিতেন প্রতিপক্ষের লোকজন।
২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট মায়ের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে নিজের কক্ষে পড়তে বসেন তাজুল। অন্য কক্ষে গিয়ে শুয়ে পড়েন তাঁর মা। রাত ১১টার দিকে ঘর থেকে তাজুলকে ডেকে নিয়ে যান একই গ্রামের নজরুল ইসলাম ও সোহানুর রহমান। তাজুলের মা পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ঘরের দরজা খোলা, ছেলে ঘরে নেই। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে দেখেন, বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ উত্তরে নজরুল ইসলামের পুকুরে তাজুলের লাশ ভাসছে। উদ্ধারের পর তাঁর শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন দেখা যায়। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষের নজরুল ইসলাম, সালেহা বেগম, সোহানুর রহমানসহ ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন লাইলী বেগম।
মামলাটির তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বছরখানেক সময় নিয়ে তদন্ত করে ২০১৮ সালে ৪ জুলাই এজাহার থেকে সাত আসামিকে বাদ দেয় তারা। দুদু মিয়া, তাফাজ্জল হোসেন (৪০), সোহেল মিয়া আ. ছোবহান ও মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল-৫ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এতে আপত্তি জানান বাদী লাইলী বেগম। পরে মামলাটি পুনর্তদন্ত করতে ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশনা দেন আদালতের বিচারক। পিবিআইয়ের তদন্তেও অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়েন নজরুল ইসলাম, সোহানুর রহমানসহ সাত আসামি। দুদু মিয়া, তোফাজ্জল হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৯ জুলাই আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। এর বিরুদ্ধেও ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিশিয়াল-৫ আদালতে গত ৩০ মে আপত্তি জানান বাদী। এতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশকে দেন আদালতের বিচারক রাজিব আহামেদ তালুকদার।
লাইলী বেগমের অভিযোগ, প্রায় ছয় বছরেও ছেলে হত্যার বিচার মেলেনি। মামলায় লড়ে এখন নিঃস্ব তিনি। তদন্তকারী সংস্থাগুলো সঠিকভাবে মামলাটি তদন্ত করছে না। প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার দাবিতে আমাকে কাফনের কাপড় পরে অনশনে বসতে হয়েছে। শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর কাছে একমাত্র চাওয়া আমার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার। তিনি যেন সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করেন। আমার ছেলের প্রকৃত হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করছি।’
ইউএনও মোহা. নাহিদুল করিম জানান, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করিয়ে হত্যা মামলার সঠিক তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন লাইলী বেগম।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।