রাজশাহী আ’লীগে দুই বলয়

সৌরভ হাবিব, রাজশাহী
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩ | ০৫:৩৮
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগে দুটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। দু’পক্ষই দলীয় সমঝোতা বিনষ্টের জন্য পরস্পরকে দুষছে। অভিযোগ উঠেছে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দু’জন এমপিকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরি করে সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। সিটি নির্বাচনের সময়ও তারা লিটনকে সহযোগিতা করেননি। অন্যদিকে শাহরিয়ার আলম বলছেন, তাঁকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনি আশা করেন, খায়রুজ্জামান লিটন দলে তাঁর পদের মর্যাদা ধরে রাখবেন। রাজশাহীর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো পক্ষ নেবেন না।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনসহ অনেকের অভিযোগ, দুই এমপি আয়েন উদ্দীন ও ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে সংগঠনে বলয় তৈরি করেছেন শাহরিয়ার আলম। তারা সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কোনো কাজ করেননি। এমনকি ফোন করেও লিটনকে শুভকামনা জানাননি। তারা যাননি মেয়র হিসেবে লিটনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও। তবে শাহরিয়ার আলম বলেছেন, তাঁকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
২০০৮ সালে প্রথমবার রাজশাহী সিটির মেয়র হন লিটন। সেবার তাঁর সমর্থনেই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে রাজশাহী-৬ আসনে শাহরিয়ার আলম, রাজশাহী-১ আসনে ওমর ফারুক চৌধুরী ও রাজশাহী-৫ আসনে কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা এমপি হন। ২০১৪ সালে লিটনের সমর্থন পেয়ে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি হন আয়েন উদ্দীন। জানা গেছে, শাহরিয়ার আলমের বলয়ে আয়েন উদ্দীন, ফারুক চৌধুরী ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক এমপি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা ও সাবেক ছাত্রনেতা আয়েন উদ্দীন রয়েছেন। ফারুক চৌধুরী মেয়র লিটনের ফুফাতো ভাই হলেও তিনি লিটনের পাশে নেই।
অন্যদিকে খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে রয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মুনসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল সরকারসহ বেশ কয়েকজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলের নেতা।
গত ৩ জুন মেয়র হিসেবে লিটনের শপথ গ্রহণ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জেলার এমপিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে সে অনুষ্ঠানে যাননি শাহরিয়ার আলম, ওমর ফারুক চৌধুরী ও আয়েন উদ্দীন।
এনামুল হক বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম, আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং আমার মনোনয়ন ২০০৮ সালে খায়রুজ্জামান লিটনের হাত ধরেই হয়েছিল। কিন্তু শাহরিয়ার দু’জন এমপিকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরি করে লিটনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এ কারণে লিটনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তারা যাননি। তারা লিটনের মনোনয়ন পাওয়া এবং মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ফোন করে অভিনন্দনও জানাননি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম আরও ১০ বছর আগে থেকেই আমার বিরোধিতা করে আসছেন। অথচ আমার হাত ধরেই দলের এমপি হয়েছিলেন। বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের গত বছর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আক্কাস সমর্থকদের সঙ্গে যখন শাহরিয়ার আলমের সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হলো, তখন আমিই তাদের থামিয়েছি। আমিই শাহরিয়ারকে ডেকে এনে সভাপতি ঘোষণা করে এসেছি। কিন্তু আমার সিটি নির্বাচনে শাহরিয়ার আলম ও তাঁর অনুগত এমপি আয়েন উদ্দীন এবং ওমর ফারুক চৌধুরী কোনো সহযোগিতা করেননি। তাদের নির্বাচনী এলাকার যেসব নেতা আমার নির্বাচন করতে আসতে চেয়েছিলেন, তাদের নিবৃত করেছেন এই তিনজন এমপি। তার পরও সিংহভাগ নেতাকর্মী এসেছেন আমার ভোট করতে। মনোনয়ন পাওয়ার পর এবং ভোটে জেতার পর একটি ফোন করেও তারা শুভকামনা জানাননি। তারা তো আসলে চেয়েছিলেন আমার পরাজয়; কিন্তু আমার জয়ে তাদেরই পরাজয় হয়ে গেল।’
এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাইনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা মেয়রের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। তবে শুভকামনা সব সময়ই রয়েছে। তিনি জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের সুযোগ্য সন্তান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আমি অতি ক্ষুদ্র একজন মানুষ। আমাকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। আশা করি, লিটন ভাই তাঁর পদের মর্যাদা ধরে রাখবেন। রাজশাহীর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কোনো পক্ষ নেবেন না। গত বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। তাঁর উপস্থিতিতে কিছু আওয়ামী লীগ নামধারী সন্ত্রাসী হামলা করেছিল, সে সময় কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক তাৎক্ষণিক তাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন। শুধু আমার নির্বাচনী এলাকার নয়, আরও
কিছু নির্বাচনী এলাকার এ ধরনের মানুষকে তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন।’
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন পেতে খায়রুজ্জামান লিটনের সহযোগিতা ছিল কিনা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘২০০৮ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচনে ফজলে হোসেন বাদশা মহাজোটের সমর্থন পেয়েছিলেন। তখন লিটনকে মেয়র মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমরা ভূমিকা রেখেছি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এমনকি দলীয় সভাপতিকেও আমরা বলেছি। দলীয় সভাপতি তখন বিদেশে ছিলেন। আমাদের আন্দোলনেই ফজলে হোসেন বাদশার মনোনয়ন বদলে খায়রুজ্জামান লিটনকে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের জয়যাত্রা শুরু।’
এমপি আয়েন উদ্দীন বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম বা কারও বলয়ে আমি নেই। শাহরিয়ার আলম বলয় তৈরি করেছেন এটাও মনে করি না। খায়রুজ্জামান লিটনকে বলেছিলাম, সব নেতাকে ডেকে নিয়ে কাজ করতে। তিনি ডাকবেন বললেও কাউকে ডাকেননি। বিভিন্ন সভায় আমার বিরুদ্ধে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন– আমি পিস কমিটির নেতার সন্তান। এর পর আর আগ্রহ থাকে? শপথ অনুষ্ঠানে লিটন ভাই আমাকে দাওয়াত করেননি।’