ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

আলোচনায় ইভিএম ও নারী ভোটার

আলোচনায় ইভিএম ও নারী ভোটার

নারী ভোটারের দীর্ঘ লাইন। সোমবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়নের সীচা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে - সমকাল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর, যশোরের বেনাপোল, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট ও কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌরসভাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গতকাল সোমবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে ছাপ না ওঠায় তিনবার শাড়ির আঁচলে আঙুল মুছতে হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌরসভার ভোটার চন্দনা রানীকে। একটি বাটনে চাপ দিলেও আরেকটিতে চাপ দিতে মনে না থাকায় পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লেগেছে তাঁর ভোট দিতে।

কুমিল্লার দেবিদ্বারের মরিচাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ না মেলায় আম্বিয়া বেগম নামের এক ভোটার ১০ মিনিট চেষ্টার পর ভোট দিতে না পেরে ফিরে যান। একই কেন্দ্রের পুরুষ ভোটার তফাজ্জল হোসেন বারবার চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারছিলেন না। এ সময় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা তাঁকে কাগজের ডেমু দেখালে তিনি ভোট দিতে পারেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রথমবার হওয়ায় অনেকে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। মেশিনে ত্রুটি থাকায়ও সমস্যা হয়েছে।

বিড়ম্বনায় বয়ষ্করা

তাড়াশ পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে বাটন চাপতে না পারায় ঝামেলায় পড়েন বয়ষ্করা। কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটাররা বাটনে বেশি জোরে চাপ দেওয়ায় ইভিএম বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ভোটারদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

কোহিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লুৎফর রহমান জানান, তাঁকে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। তাঁর বুথে ইভিএমে সমস্যা দেখা দেয়। ভাদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আমেনা খাতুন (৬৫) জানান, মেশিনে ভোট দেওয়ার বিষয়টি তাঁর মতো ভোটারদের বুঝতে সময় লেগেছে। আলোর স্বল্পতায়ও কষ্ট হয়েছে।

রঘুনিলী মঙ্গলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. নূরুন্নবী বলেন, বয়স্ক ভোটাররা ইভিএম মেশিনে এমনভাবে চাপ দেন যে অচল হয়ে পড়ে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফের চালু করায় ভোট দিতে বিলম্ব হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. মুজিবুল আলম বলেন, ইভিএমে শুরুতে ধীরগতি হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাভাবিক হয়েছে।

তিনবার বোতাম চাপের পর ওঠে মার্কা

এক যুগ পর বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটদানে ধীরগতির অভিযোগ করেন ভোটাররা। সময় শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা পরও ভোট গ্রহণের খবর মিলেছে। কাউন্সিলর প্রার্থী সুলতান আহমেদ বাবু, আইয়ুব হোসেন পক্ষী ও আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, ভোটাররা এ পদ্ধতিতে তেমন অভ্যস্ত না হওয়ায় এমন হচ্ছে।

ভোটার কামাল হোসেন বেনাপোল হাই স্কুল কেন্দ্রে বলেন, তিনবার বোতাম চাপার পর মার্কা উঠেছে। তাঁর তিনটি ভোট দিতে প্রায় ১০ মিনিট লেগেছে। বেনাপোল বাজার পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, দু-একটি ইভিএম কাজ না করায় সমস্যা হয়েছে। সাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট না দিয়ে চলে যেতে দেখা যায় চার-পাঁচজন নারীকে। সালেহা খাতুন জানান, দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু একজন ভোটার ছয় থেকে সাত মিনিটেও ভোট দিতে পারছেন না। এই কেন্দ্রে প্রথম দেড় ঘণ্টায় ভোট পড়ে ২৫৬টি।

১৮ মিনিটে ১ ভোট

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট পৌরসভা নির্বাচনেও ইভিএমে ভোট দিতে বেশি সময় লাগে বলে জানান ভোটাররা। কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মনিরের অভিযোগ, একটি ভোট দিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হয়। ধীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১টায় একটি বুথে পাঁচ ঘণ্টায় ৯০টি ভোট পড়েছে। ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ১৮টি করে। অপর বুথে পাঁচ ঘণ্টা ১০ মিনিটে ৯৮টি ভোট পড়ে।

চর সাটমাটিয়া কেন্দ্রে সুজাউদ্দৌলা বলেন, তিনি প্রথম ইভিএমের কার্যক্রম বুঝতে না পারায় ভোট দিতে দেরি হয়েছে। ধীপুর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লুৎফর রহামান খান বলেন, ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় একটু সময় লেগেছে। একজন ১৮ মিনিট সময় নিয়েছেন। এ ছাড়া মেশিনও নষ্ট হয়েছিল।

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ

দেবিদ্বার পৌরসভার দক্ষিণ ভিংলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন কলেজছাত্রী প্রিয়া আক্তার। তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েও ১২টায় ভোট দিতে পারেননি। লাইনের শেষ দিকে থাকা রমুজা বেগম (৮৫) বলেন, এ বয়সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

প্রিসাইডিং অফিসার মাইন উদ্দিন বলেন, ইভিএম নিয়ে নারী ভোটারদের মধ্যে প্রচারণার অভাবে ভোট দিতে সমস্যা হয়েছে। দীর্ঘ লাইন দেখে কেউ কেউ বাড়ি ফিরে যান।

কুমিল্লা জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, ইভিএমে দেবিদ্বারে প্রথম ভোটে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিত ছিলেন। ইভিএমে নতুন হওয়ায় অনেকে ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

দেরি হওয়ায় অনেকে হয়ে পড়েন অসুস্থ

ভাণ্ডারিয়ায় ইভিএম পদ্ধতির কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলে জানান ১ নম্বর কেন্দ্রের বিউটি, বেগম, রেবা, নুরনাহার, হিরণ মুন্সি; ৫ নম্বর কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়া শিউলী বেগম ও ৮ নম্বর কেন্দ্রের মাহফুজা আক্তার। তাঁদের কয়েকজন জানান, দেরি হওয়ায় অনেকে অসুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।

ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা গঠনের পর এবার প্রথমবার ভোট দিলেন ভোটাররা। নির্বাচনে মেয়র পদের দু’জন প্রার্থীর সমর্থক বেশি থাকায় ৯টি কেন্দ্রেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিহারী লাল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি।

৪ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, সকালে দুটি কক্ষের ইভিএম মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে ভোট গ্রহণে বিলম্ব হয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মজিদা বেগম মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, ১ হাজার ৮৪০ জনের মধ্যে সাড়ে ৯টার মধ্যে ১৬২ জন ভোট দেন।

ছেংগারচরে মারামারি

মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার নির্বাচনে নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল বেশি। পৌরসভার ১৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলে। ইভিএমে এখানেও ভোট গ্রহণে দেরি হয়েছে।

ছেংগারচর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে কাউন্সিলর প্রার্থী সোলেমান ফরাজি রতন ও ইয়াসিন খানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অনেক ভোটার চলে যান। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, যারা নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারী ভোটার রোকেয়া বেগম জানান, তিনি দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ভোট দিতে পারেননি। ছেংগারচর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাহজাহান বলেন, সকাল থেকেই ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ছিল।

তথ্য দিয়েছেন চাঁদপুর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, যশোর, ভাণ্ডারিয়া, তাড়াশ, বেনাপোল ও দেবিদ্বার প্রতিনিধি

আরও পড়ুন

×