ইজিবাইক-অটোরিকশা চার্জে খরচ চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ

সাটুরিয়া বাজারে যাত্রীর অপেক্ষায় কয়েকটি অটোরিকশা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা - সমকাল
মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩ | ১০:০১ | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩ | ১০:০১
গাজীখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া বন্দর এক সময় ছিল জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। তবে এখনও আবেদন কমেনি উপজেলা শহরটির। দিনে হাজারো মানুষের আসা-যাওয়া এখানে। যে কারণে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশার চালকদের বেশ আয়-উপার্জন হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যানবাহনের সংখ্যা উপজেলায় প্রয়োজনের চেয়েও বেশি হয়ে পড়ছে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে। তাদের ভাষ্য, উপজেলায় দৈনিক বিদ্যুতের যে চাহিদা রয়েছে, এর অর্ধেকই চলে যায় এসব যানবাহনের চার্জে। ফলে অন্য গ্রাহকদের নানাভাবে ভুগতে হয়।
সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সব মিলিয়ে উপজেলায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা তিন সহস্রাধিক। এর মধ্যে এক হাজারের মতো চার চাকার হ্যালোবাইক। তবে এ সংখ্যা পুরোটাই অনুমানভিত্তিক। কোনো ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েই সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহনের নিবন্ধন না থাকায় তাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।
সাটুরিয়া পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে এসব যানবাহনের বিষয়ে কথা হয় সমকালের। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একটি ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, রিকশা ও ইজিবাইকে পাঁচটি করে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থাকে। সাধারণ হিসাবে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারির ধারণক্ষমতা ২ কিলোওয়াট। দিনে ৫ ব্যাটারির একটি ইজিবাইক ৮ ঘণ্টা চার্জ দিলে ১৪ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। উপজেলায় এসব যানের সংখ্যা পাঁচ হাজার ধরলে, দিনে এসব যান বিদ্যুৎ গিলছে ৭০ হাজার ইউনিট। অথচ উপজেলায় বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১৩ থেকে ১৪ মেগাওয়াট। গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে এসব যানবাহনের পেছনে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ইঞ্জিনচালিত নয় বলে এসব যানকে সড়কে চলাচলের নিবন্ধন দেয় না। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ এসব যানবাহনে চার্জ দেওয়ার জন্য আলাদা ট্যারিফ নির্ধারণ করে সংযোগ দিচ্ছে। দিনে সমস্যা কম হলেও রাতে এসব যানবাহন চার্জে বসান মালিক ও চালকরা। তখনই অন্য গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা যায় না।
বালিয়াটি অটোরিকশাচালক ও ইজিবাইকচালক সমিতির সভাপতি মো. ভুলু মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম দাবি করেন, সড়কে গাড়ি বেশি হওয়ায় আয়-রোজগার কমে গেছে। বেশির ভাগ লোকই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে লক্ষাধিক টাকায় এসব যানবাহন কেনেন। এর আয়ে তাদের সংসার চলে। তাদের ভাষ্য, আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসত। এখন ৮ ঘণ্টা ইজিবাইকের পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি চার্জ দিলে বিদ্যুৎ খরচ হয় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। ঋণের কিস্তি ও বিদ্যুৎ বিল দিয়ে খুব অল্প টাকাই হাতে থাকে।
মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও সবুজ বনায়ন আন্দোলনের সভাপতি মো. রাজ্জাক হোসাইন রাজ বলেন, অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত যানের কারণে প্রচুর পরিমাণ বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত, বিষয়টির সমাধানে উদ্যোগী হওয়া। সাটুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন পিন্টু মনে করেন, এসব যানবাহনের নিবন্ধন দেওয়া উচিত।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাটুরিয়া জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সাটুরিয়ায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এসব গ্রাহকের মিটারে ১ কিলোওয়াট থেকে ২ কিলোওয়াট ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, বেশির ভাগ মিটারেই ৩ থেকে ৪ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। এর কারণ অনুসন্ধানে তারা দেখেন, উপজেলাজুড়ে ৫ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে রাতে চার্জ দেওয়া হয়। ফলে তাদের দৈনিক বিদ্যুতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে গড়ে ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াটে।
ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদের ভাষ্য, উপজেলায় বরাদ্দ বিদ্যুতের অর্ধেকের বেশিই গিলছে এসব ছোট যানবাহন। ওই বিদ্যুৎ দিয়ে দুটি ইউনিয়নের চাহিদা পূরণ করা যায়। লোডশেডিং কমাতে তারা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন।