চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন
সময়ক্ষেপণের খেসারত হাজার কোটি টাকা

স্কুলের পেছনে ডোবা। জমে থাকা পানিতে বিস্তার হচ্ছে মশার। ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে কোমলমতিরা। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার সুলতান আল নাহিয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রোববার তোলা - সমকাল
আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩ | ০৪:৪৩ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ | ০৪:৪৩
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৯ বছর আগে ‘বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প’ হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রকল্পের আওতায় বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খালটি খনন করার কথা। এত বছর পরও প্রকল্পটির মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৪১ শতাংশ। তবে আশার খবর হলো– চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ছয় বছর আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ৭৭ শতাংশ কাজ এগিয়ে নিয়েছে।
চসিকের খাল খনন প্রকল্পটি এরই মধ্যে তিন দফা সংশোধন করা হয়েছে। খরচ বেড়েছে চার গুণের বেশি। ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকায়। সময়ক্ষেপণের ফলে খেসারত দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৭৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিনজন মেয়র ও একজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করলেও কেউ খাল খননের কাজটি শেষ করতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ ফের বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন হবে কিনা সংশয় রয়েছে। মেয়াদের মধ্যেই এ প্রকল্প সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরের জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছর মে মাসে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রকল্পের ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রয়োজনে প্রকল্প পরিচালক বদলেরও নির্দেশনা দেন। যদিও পরে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
চসিক সূত্র জানায়, নগরে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করলে ২০১১ সালে খাল খননের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের জুনে একনেক সভায় বহদ্দারহাটের বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পের অনুমোদন হয়। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। নির্দিষ্ট সময়ে অর্থ ছাড় না হওয়ায় বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও।
প্রথম দফায় ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। খরচও বেড়েছে আরও দুই দফা। এখন প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকায়। সময়ক্ষেপণের খেসারত দিতে হচ্ছে হাজার কোটি টাকার বেশি।
প্রকল্পটি যখন অনুমোদন পায় তখন মেয়র ছিলেন বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম। তিনি খাল খনন কাজ শুরু করে যেতে পারেননি। পরে ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি তড়িঘড়ি করে খাল খননকাজ উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্তই শেষ। তাঁর মেয়াদ শেষ হলে নগর প্রশাসকের দায়িত্ব পান নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। ছয় মাস দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেয়রের দায়িত্ব নেন রেজাউল করিম চৌধুরী। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর তিনি আবারও খাল খনন উদ্বোধন করেন। এর পর দুই বছর পার হয়ে গেছে। চলছে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ। খাল খননের মূল কাজ এখনও শুরুই হয়নি।
২ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের খালটি খননের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ২৫ একর। প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য পাঁচটি এলএ মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলার ভূমি হস্তান্তর হয়েছে। ভূমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় দখল ছাড়েননি মালিকরা। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, ভূমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় মালিকরা প্রকল্পের কাজে বাধা দিচ্ছেন।
সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) আবু রায়হান দোলন বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে কিছু মামলা চলমান থাকায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। মামলা নিষ্পত্তির পর দেওয়া হবে।
বাড়ইপাড়া খাল খনন প্রকল্পের পরিচালক ফরহাদুল আলম বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু বাধা রয়ে গেছে। পাঁচ একর জমির অধিগ্রহণ এখনও নেওয়া যায়নি। জমি না পাওয়া পর্যন্ত কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, তা বলা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।