ভুয়া চিকিৎসক
অনায়াসে হৃদরোগের চিকিৎসা করছিলেন এইচএসসি পাস নুরুল

ছবি: সমকাল
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ০১:৩৭ | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ | ০১:৩৮
অর্ধশতবর্ষী নুরুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস। জীবনে কোনদিন মেডিকেল কলেজ কিংবা চিকিৎসা সহকারী প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ের (ম্যাটস) বারান্দায়ও পা রাখেননি। এরপরও তিনি হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালী জেলা শহরের নামিদামী হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে সাতশ টাকা ভিজিট নিয়ে নিয়মিত রোগী দেখে আসছেন।
একই সঙ্গে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে ইকো-কার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষাও করতেন। তার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে বহু রোগী অকালে মারা গেছেন। শনিবার সন্ধ্যার দিকে তাকে জেলা শহরের নাপিতের পুল এলাকার আমেরিকান স্পেশালাইজড হসপিটালে পিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন ও চিকিৎসকরা।
খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে সুধারাম মডেল থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শনিবার রাত ১১টার দিকে থানায় মামলা হলে ওই মামলায় তাকে গ্রপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে ভুয়া চিকিৎসক বলে স্বীকার করেছেন। সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল সরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র ডা. অনিক বিশ্বাস বলেন, ‘বিএমডিসির (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) স্টাফ বোরহান উদ্দিনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তার সহযোগিতায় রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে পাস করা নুরুল ইসলাম নামের এক চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বনে যান এই নুরুল ইসলাম। এরপর তিনি কুষ্টিয়া ও কক্সবাজারে গিয়ে তার অপচিকিৎসার মাধ্যমে প্রতারণা শুরু করেন।’
শনিবার রাতে সুধারাম মডেল থানায় এই প্রতিবেদকের কথা হয় নুরুল ইসলামের সঙ্গে। ওসি বলেন, ‘জাল সনদ সংগ্রহ করে কক্সবাজার ও কুষ্টিয়াতে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। তিনটি বিয়ে করেছেন। দুই স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় এবং এক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ওই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘গত করোনা মহামারির সময় জেলা শহরের বেসরকারি একটি হৃদরোগ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে তিনি আবেদন করেন। এরপর নোয়াখালীতে এসে দেখতে পান ওই হাসপাতালের অবস্থা ভাল নয় এবং রোগীও তেমন নেই। তারপর শহরের এক উকিলের মাধ্যমে জেলা শহরের অন্যতম বড় বেসরকারি হাসপাতাল গুডহিল কমপ্লেক্সে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি ইকো-কার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করে ভুয়া রিপোর্ট দিতেন।’
নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. যিশু দাস বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তি চিকিৎসকই নন। তিনি ভুয়া ও প্রতারক। তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করে আরেকজন এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে দীর্ঘ দিন ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার দেওয়া ব্যবস্থাপত্র ও চিকিৎসার নমুনা দেখে স্থানীয় চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। পরে তারা বিষয়টি নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখারকে অবহিত করেন।’
স্থানীয় চিকিৎসকরা নুরুল ইসলামকে শনিবার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে আমেরিকান স্পেশালাইজড হসপিটালে হৃদরোগে আক্রান্ত একজন রোগীর ইকো করার জন্য জরুরি কল করলে তিনি দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন। সেখানে অবস্থানরত শহরের চিকিৎসকরা তাকে আটক করে সিভিল সার্জনকে ঘটনাটি ফোনে জানালে তিনি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাঈমা নুসরাত জেবিনসহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসককে ওই হাসপাতালে পাঠান। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল ইসলাম তার জালিয়াতির কথা অকপটে স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টেনোগ্রাফার মো. গিয়াস উদ্দিন বাদি হয়ে একটি মামলা করেন।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ভুয়া চিকিৎসক চিহ্নিত করতে খুব শীগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
সুধারাম মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া চিকিৎসক আটকের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’
- বিষয় :
- ভুয়া চিকিৎসক
- ভুয়া ডাক্তার
- প্রতারণা