ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বেঁচে ফেরা যাত্রীরা নদীতীরে নিখোঁজদের অপেক্ষায়

বেঁচে ফেরা যাত্রীরা নদীতীরে নিখোঁজদের অপেক্ষায়

নদীপাড়ে স্বজনদের আহাজারি- (ছবি-মিজানুর রহমান ঝিলু)

মুন্সীগঞ্জ ও লৌহজং প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৯:২১ | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৯:২১

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের লতব্দী ইউনিয়নে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ট্রলারডুবির ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছে ছয়জন। তাদের অপেক্ষায় নদীতীরে বসে আছেন দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা যাত্রীরা। তারা সবাই একে-অপরের আত্মীয়স্বজন। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা। 

শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে নারী-শিশুসহ আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ৩২ জন। 

বিকেলে ট্রলারে নদীভ্রমণে গিয়েছিলেন ৪৬ জন। সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে রাতে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ডহরী-তালতলা খালের রসকাঠি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে এক নারী, তিন শিশু ও চার যুবক রয়েছে। এক শিশুর নাম রায়হান (৮)। অন্যদের নাম জানা যায়নি। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারটির ছাদে বাঁশ ও কাপড় দিয়ে শামিয়ানা টানানো ছিল। দুর্ঘটনার পর পরই ট্রলারের যাত্রীদের স্বজনরা নদীপাড়ে চলে আসেন। সেখানে নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা আহাজারি করছেন। মরদেহ উদ্ধারের পর পরই প্রিয়জনের খোঁজে তারা সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।

লৌহজং থানার এসআই রুস্তম আলী জানান, ওই ট্রলারে প্রায় অর্ধশত যাত্রী ছিলেন। এখনও ছয়জন নিখোঁজ। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।

স্থানীয়রা জানান, যে জায়গায় ট্রলারটি ডুবে গেছে, তার একপাশে লৌহজংয়ের রসকাঠি গ্রাম আর অপর প্রান্তে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সিলিমপুর গ্রাম। দুর্ঘটনার পর দুই পাড়ের মানুষ ছুটে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন আসেন। কিন্তু রাতের অন্ধকার আর নদীতে প্রবল স্রোত থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের উদ্ধারকাজ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। বাল্কহেড রেখে চালক পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে লৌহজং উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার আবদুল মতিন জানান, লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামের ৪৬ জন বিকেলে ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে পিকনিকে গিয়েছিলেন। পিকনিক শেষে রাতে লতাব্দীর দিকে ফিরছিলেন তারা। পথে ট্রলারটি লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় পৌঁছালে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে ট্রলারটি পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় ট্রলারের অধিকাংশ যাত্রী সাঁতরে উঠলেও ১৪ জন ডুবে যান। তাঁদের মধ্যে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা নিখোঁজ।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নুরে আলম বলেন, হাসপাতালে দুই শিশুর মরদেহ আনা হয়েছে। একজনের বয়স ৮ বছর; আরেকজনের ৫ মাস।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর অনেকেই সাঁতরে তীরে উঠে পড়েন। হতাহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। 

ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক আবু জাফর রিপন ও লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আউয়ালসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা রয়েছেন। তারা উদ্ধারকাজ তদারকি করছেন।


আরও পড়ুন

×