ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ভিডিও কলে বিয়ে, স্ত্রীর কাছে লাশ হয়ে ফিরলেন

ভিডিও কলে বিয়ে, স্ত্রীর কাছে লাশ হয়ে ফিরলেন

স্বামী হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায় রুবেলের স্ত্রী মরিয়ম - সমকাল

বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৫:০৯ | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৫:০৯

রাজশাহীর বাগমারার রুবেল হোসেন ও মরিয়ম আক্তার প্রায় ১০ বছর প্রেম করেছেন। দু’জন দু’জনকে হৃদয়ে ধারণ করলেও বিপত্তি বাধে বিয়ের আলাপ ওঠায়। ছেলে বেকার হওয়ায় তাঁর কাছে মেয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় মরিয়মের পরিবার। এতে প্রেমকে পরিণয়ে রূপ দিতে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন রুবেল। কর্মের সন্ধানে চলে যান সৌদি আরব।

সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরলে মন গলে তার প্রেমিকার অভিভাবকদের, বিয়েতে রাজি হন তারা। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় বিয়ের পিঁড়িতে পাশাপাশি বসার সৌভাগ্য হয়নি এই যুগলের। ১০ মাস আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও কলে তাদের বিয়ে হয়। এরপর থেকেই স্ত্রীর কাছে ফেরার জন্য দিন গুনছিলেন এই প্রবাসী। অবশেষে তিনি ফিরেছেন। কিন্তু লাশ হয়ে।

গত ১৪ জুলাই সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরে অগ্নিকাণ্ডে যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে রুবেল একজন। বুধবার জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

রুবেলের স্ত্রী মরিয়ম বলেন, দীর্ঘদিনের প্রেম হলেও রুবেল প্রবাসে থাকায় আমাদের বিয়ে হয় ভার্চুয়ালি। প্রেমিক হিসেবে বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে দেখা হলেও স্বামী হিসেবে তার মুখটি একবারের জন্যও দেখতে পারিনি। ছুটি না পাওয়ায় তিনি বাড়িতে আসতে পারেননি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মরিয়ম বলেন, অবশেষে ছুটি তিনি পেয়েছেন, কিন্তু ঘুমিয়ে গেছেন চিরদিনের জন্য। তার স্মৃতি নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

জানা গেছে, ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৭ জনের মধ্যে চারজন বাগমারার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামে এবং অন্যজন যোগীপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুড়ি গ্রামের।

আজ দুপুরে তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। একে একে সবার জানাজা শেষে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বারুইপাড়া প্রবাসীদের গ্রাম বলে পরিচিত। এ গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল, জমির মন্ডলের ছেলে সাজেদুল ইসলাম ও শাহাদত হোসেনের ছেলে আরিফ হোসেন দাম্মামের হুফুফ শহরে একটি সোফার কারখানায় কাজ করতেন। দুর্ঘটনার দিন তারা ও যোগীপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধায় মুড়ি গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরোজ আলী সরদার একসঙ্গে ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে তারা সবাই নিহত হন।  

প্রতিবেশীরা জানান, সাজেদুল ও আরিফ সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। আরিফ সৌদি আরব যান ৮ মাস আগে। ২০১৬ সাল থেকে প্রবাসী চাচা সাজেদুল তাকে নিয়ে যান। কাজের ব্যবস্থা করেন একই কারখানায়। অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়ে একসঙ্গেই ফিরেছেন লাশ হয়ে।

স্বামী হারিয়ে সাজেদুলের স্ত্রী শোকে পাথর। আর ছেলে হারানোর শোক সইতে পারছেন না আরিফের মা। তাদের আর্তনাতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে ফিরোজ সাড়ে ৩ বছর ধরে সৌদিতে কাজ করছিলেন। তার বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। লাশ না দেখতে পেরে তার মায়ের আফসোসের সীমা নেই।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিরোজের বীভৎস লাশ তার মাকে না দেখানোর জন্য। ফিরোজের একমাত্র মেয়েও বাবার জন্য হাউমাউ করে কাঁদছে। একবারের জন্য হলেও বাবার মুখ দেখতে চাচ্ছে সে। 

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, মঙ্গলবার রাতে চারজনেরই মরদেহ ঢাকায় পৌঁছায়। এরপর পরিবারের লোকজন যার যার স্বজনের লাশ বুঝে নেয়। জানাজা শেষে তাদের দাফনও হয়ে গেছে বলে শুনেছি।

আরও পড়ুন

×