আত্মরক্ষা
কারাতে আগ্রহ বাড়ছে কুড়িগ্রামের মেয়েদের

কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে কারাতে প্রশিক্ষণে মেয়েরা- সমকাল
সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৩ | ০২:১১
বখাটে ও উত্ত্যক্তকারীদের তৎপরতা আজও বড় সমস্যা। শহর কিংবা গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও পাড়ার অলিগলিতে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এখনও থামানো যায়নি। বখাটেদের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কুড়িগ্রাম শহরের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে শিক্ষার্থীরা কারাতে শিখছে। এতে তাদের মধ্যে আত্মরক্ষার মনোবল বাড়ছে।
মেয়েদের কারাতে শেখাকে এখনও অনেকে ভালো চোখে দেখেন না। এই সামাজিক বাধা উপেক্ষা করেই কারাতে শেখা মেয়ের সংখ্যা এ জেলায় দিন দিন বাড়ছে। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের আত্মবিশ্বাস দেখে অভিভাবকরাও এতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী কারাতে শিখছে। স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলার কক্ষে চলছে এ প্রশিক্ষণ। এখানে ছেলেদের তুলনায় মেয়েই বেশি। কক্ষের বাইরে অভিভাবকরা বসে সন্তানদের নানা কৌশল উপভোগ করছেন। প্রতিদিন এখানে সকালে ও বিকেলে আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসে কারাতে শিখতে। সকালের চেয়ে বিকেলেই বেশি মেয়ে আসে। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনজন কারাতে প্রশিক্ষক। নামমাত্র ফি দিয়ে এখানে ৬২ জন কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এর মধ্যে মেয়ে ৩৫ জন।
মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে। এখন যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সক্ষম। রাস্তায় চলাচলের সময় বখাটেরা শিস দিলে কিংবা বাজে মন্তব্য করলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করার আত্মবিশ্বাসও বাড়ছে তাদের মধ্যে। পাশাপাশি কারাতের বিভিন্ন কৌশল তাদের শারীরিকভাবেও মজবুত করছে।
কারাতে শিখতে আসা কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলে, ‘আমি এখানে এক মাস ধরে কারাতে শিখছি। প্রথম দিকে অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করত। এসবকে পাত্তা না দিয়ে আমি এখানে নিয়মিত শিখতে আসি। মেয়েরা এখনও প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে। নিজের প্রতিরক্ষার জন্য আমার এটি শিখতে ভালো লাগে।’
একাদশ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সিনিয়া আক্তার জিশা বলে, ‘আমি এখানে তিন বছর ধরে কারাতে শিখছি। শুরুর দিকে ছেলেদের সঙ্গে শিখতে হতো। এখন অনেক মেয়ে আসে শিখতে। বিষয়টি সত্যি ভালো লাগার। আমি কারাতে প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায় থেকে ব্ল্যাকবেল্ট পেয়েছি। আমাদের সমাজে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য এটি শেখা খুবই প্রয়োজন।’
মো. মুরাদ নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘একজন দায়িত্বশীল বাবা হিসেবে প্রত্যেকের উচিত নিজের মেয়েকে কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া।’ রেশমা আক্তার নামের আরেক অভিভাবক বলেন, ‘আমি একজন সচেতন মা হিসেবেই আমার মেয়েকে কারাতে প্রশিক্ষণে দিয়েছি। তিন বছর ধরে শিখছে সে। এখন মেয়ের সঙ্গে নিঃসংকোচে যে কোনো জায়গায় যেতে পারি। নিজের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভয় আর কাজ করে না।’
কুড়িগ্রাম কারাতে ফেডারেশনের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষক খাজা ইউনুস ইসলাম বলেন, ‘আমি ৪৫ বছর ধরে কারাতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। আগে মেয়েদের তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করিনি। গত দুই বছরে মেয়ের সংখ্যা বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে তিনজন প্রশিক্ষক রয়েছি। এখানকার শিক্ষার্থীদের দেওয়া ফি দিয়ে চলছে আমাদের বেতন-ভাতা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে স্থায়ীভাবে সম্মানী ভাতা দিলে আমরা এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারব। এ ছাড়া একটি মাত্র কারাতে ম্যাট দিয়ে চলছে আমাদের প্রশিক্ষণ। আরও কিছু ম্যাট পেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কারাতে প্রশিক্ষণে মেয়েদের সংখ্যাটা বৃদ্ধি ভালো দিক। তাদের প্রশিক্ষণ নিতে কারাতে ম্যাটসহ যেসব সমস্যা রয়েছে, আমরা দ্রুত তার সমাধান করব।’
- বিষয় :
- আত্মরক্ষা
- কারাত
- উত্ত্যক্ত
- রংপুর
- কুড়িগ্রাম