ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানে জলজট

তিন জেলায় ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকারও বেশি

তিন জেলায় ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকারও বেশি

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ। ছবি: সংগৃহীত

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের ১৫ উপজেলায় টানা বন্যার পানিতে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ভেসে গেছে সহস্রাধিক পুকুর ও মাছের ঘের। বানের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকায় আছে চট্টগ্রাম নগরও। জলজটে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক। এ ছাড়া ২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার নালা ও প্রায় ২ কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু নগরের সড়ক, নালা ও ফুটপাত সংস্কারে অন্তত ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। সব মিলে জলজটে এই তিন জেলায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সমকালকে জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। বিভিন্ন স্থানে দুর্গত মানুষ আছে। অব্যাহত আছে ত্রাণ কার্যক্রমও। সড়ক-মহাসড়ক, ফসলি জমি কিংবা ঘরবাড়ির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব পেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, বন্যায় চট্টগ্রাম জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটার প্রাথমিক তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। এই ক্ষতির পরিমাণ আর্থিক অঙ্কে ১০০ কোটি টাকার বেশি।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার জানান, বন্যায় চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ১৫ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে সাতকানিয়ায় ছয়জন, লোহাগাড়ায় চারজন, চন্দনাইশে দুইজন, রাউজানে একজন, বাঁশখালীতে একজন ও চট্টগ্রাম শহরে একজন মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের ৬০ হাজার ৮০১ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে গেছে। এসব জমিতে আমন ও আউশের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি ও ফল চাষ করা হয়েছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বান্দরবানে ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এর বাইরে রাঙামাটিতে ৫৯৩ হেক্টর ও খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ১৩৬ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ১৫ হাজার ৬৩৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে বানের পানি এখনও পুরোপুরি নামেনি। অনেক উপজেলায় যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, তিন জেলায় ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ অংশে অন্তত ১০ কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে রেললাইনের বিভিন্ন অংশ থেকে পাথর সরে গেছে, কোথাও কোথাও মাটি সরে লাইন বাঁকা হয়ে গেছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তিন থেকে চার কিলোমিটার অংশ ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুরো রেললাইন হিসাবে আনলে এটির পরিমাণ আরও বাড়বে।

পার্বত্য জেলায় এবার পাহাড়ধস হয়েছে ৩৫৭টি স্থানে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছয় হাজারের বেশি মানুষ। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০০ গ্রাম। এতে ১০ হাজার ৬১৭টি পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমির ফসল। এ ছাড়া বন্যায় ৬ হাজার ৫১৪টি ঘর, ৩৬টি ব্রিজ-কালভার্ট, ১৮টি বাজার, ২৪টি বিদ্যুতের খুঁটি ও ১৫০টি পুকুর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ২০ থেকে ৩০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে শুধু কক্সবাজারে। চট্টগ্রামে এ সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাটির ঘর। চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা এলাকায় মাছের ঘের ও পুকুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার শিলখালী, বারবাকিয়া ও টৈটং এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও চূড়ান্ত করতে পারিনি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব পাব।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগের প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশ যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চন্দনাইশে এর পরিমাণ ৩০ কিলোমিটার। এ উপজেলার দুটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।

চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মাদ জুনাইদ আবছার চৌধুরী জানান, এলজিইডির আওতায় চন্দনাইশে সড়ক রয়েছে ৪০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে উপজেলার দুটি পৌরসভা চন্দনাইশ ও দোহাজারী এবং আটটি ইউনিয়ন কাঞ্চনাবাদ, জোয়ারা, হাশিমপুর, বৈলতলী, বরমা, বরকল, সাতবাড়িয়া ও দুর্গম ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। উপড়ে গেছে কয়েকটি কালভার্ট। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ৫০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

×