ক্লিনিকে নবজাতকের মৃত্যু, স্বজনের দাবি ভুল চিকিৎসা

ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:১৫ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:১৫
সোমবার দুপুরে উপজেলা সদরের লাইফ কেয়ার হসপিটাল ও ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাবে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
মৃত নবজাতক উপজেলার আতরখালী গ্রামের জোবায়ের হোসেন ও হালিমা বেগমের সন্তান।
হালিমা বেগমের শ্বশুর মো. মোদাচ্ছের হোসেন জানান, সোমবার সকালে তাঁর ছেলে বউয়ের প্রসব বেদনা শুরু হলে তাঁকে ভাণ্ডারিয়া লাইফ কেয়ার হসপিটাল ও ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক ল্যাবে ভর্তি করা হয়। ওই সময় সেখানে কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছিলেন না। কর্তব্যরত নার্স এ তথ্য গোপন করে বাচ্চা জোর করে প্রসব করান। যার ফলে নবজাতক তাৎক্ষণিক মারা যায়। নার্সরা তাঁকে জানান, তাঁর ছেলের বউ মৃত বাচ্চা প্রসব করেছেন। পরে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে গেলে প্রসবের সঙ্গে জড়িত নার্সরা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। মৃত নবজাতককে সোমবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নবজাতকের মা এখনও ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী প্রসূতি হালিমা বেগম সমকালকে বলেন, তিনি সোমবার সকালে সুস্থ অবস্থায় ওই ক্লিনিকে আসেন। ক্লিনিকে আসার পরে তাঁর আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। এ সময় তিনি দেখতে পান বাচ্চা পেটে নড়াচড়া করছে। যিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন তিনি জানান, বাচ্চা সুস্থ আছে কিন্তু নরমাল হবে না, অপারেশন করতে হবে। এ সময় হাসপাতালে আসা তাঁর ভাইকে সিজার অপারেশনের জন্য ওষুধ আনতে পাঠান কর্তব্যরত নার্স। পরে নার্সরা তাঁকে একটি রুমে নিয়ে যান। এ সময় বাচ্চার একটি পা বের হয়ে যায়। ডাক্তার না থাকায় মঞ্জু নামে এক নার্স তাঁকে আয়াদের নিয়ে বাচ্চা প্রসবের জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। তিনি বাচ্চাকে বের করতে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন। কিন্তু বাচ্চার মাথা বের হচ্ছিল না। পরে একজন ডাক্তার এসে তাঁর পেটে জোরে চাপ দিয়ে বাচ্চার মাথা বের করে নিয়ে আসেন। এ সময় ওই ডাক্তার তাঁকে বলেন, এতটুকু উপকার করেছি যে, আপনার প্রাণটা বাঁচিয়েছি। বাচ্চা বের হওয়ার পর তিনি দেখতে পান সে শ্বাস নিচ্ছে না। এর পর তিনি জ্ঞান হারান। হালিমা জানান, তার সঙ্গে থাকা অভিভাবকরা ভেবেছিলেন তাঁকে সিজার অপারেশন করা হচ্ছে। অথচ তাঁকে অপারেশন না করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্রসবের চেষ্টা করেন নার্সরা। তিনি বলেন, নবজাতকের শরীরের সবকিছু ভেঙেচুরে যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েই সে মারা গেছে।
অভিযোগ পেয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন আরাফাত রানা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দেবনাথ ও ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসিকুজ্জামান সোমবার ক্লিনিকটি পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দেবনাথ বলেন, ওই নারীর প্রসব বেদনা শুরু হলে সিজারের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এ মুহূর্তে বাচ্চার পা আগে বের হয়ে আসায় টানাটানি হয়তো হয়েছে। পরে মৃত অবস্থায় বাচ্চা প্রসব হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময় ভুল চিকিৎসাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল ও পিরোজপুর কার্যালয়ের যৌথ অভিযানে মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট ব্যবহারের অপরাধে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া অনিয়ম পাওয়ায় ২০২০ সালে বরিশাল র্যাব-৮ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে আর্থিক দণ্ড দেওয়া হয়।
- বিষয় :
- নবজাতকের মৃত্যু
- ক্লিনিক
- ভুল চিকিৎসা
- বরিশাল
- পিরোজপুর