ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অন্ধকারে সাড়ে ৮ হাজার গ্রাহক

অন্ধকারে সাড়ে ৮ হাজার গ্রাহক

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর নারায়ণপুর ইউনিয়নের পূর্ব নারায়ণপুরের প্রামাণিক পাড়া সমকাল

গোলাম মওলা সিরাজ, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় সাবমেরিন কেবলে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় এক মাস ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলের সাড়ে আট হাজারেরও বেশি গ্রাহক।

স্থানীয়দের ভাষ্য, উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এবং সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের এসব গ্রাহক গত ২০ জুলাই থেকে অন্ধকারে রয়েছেন। সেচসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখেন তারা। পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (কুড়িলাপবিস) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, গত কয়েক দিন সাবমেরিন কেবলের ত্রুটি শনাক্তের কাজ করে উপজেলার মাদারগঞ্জ চৌদ্দঘড়ি এলাকায় কেবল নষ্ট পেয়েছেন তারা। তবে নদীতে পানি বাড়ার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, দুই বছর আগে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার চরাঞ্চলের ৬০ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় কুড়িলাপবিস। এতে ৫৫টি চরের ৫৭ গ্রামে প্রায় ১৮ হাজার গ্রাহক সুবিধা ভোগ করছেন।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট সেতুর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় দুধকুমার নদের পূর্বপাশে সোনাহাটবন্দরসহ নাগেশ্বরীর কচাকাটা থানা এলাকায়। ওই সংযোগ থেকে নাগেশ্বরীর বল্লভেরখাসের মাদারগঞ্জ চৌদ্দঘুড়ি চরমাঝিয়ালি এলাকায় গঙ্গাধর নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে দুর্গম চরাঞ্চল নারায়ণপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। একই সংযোগ থেকে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র পার করে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলেও সংযোগ দেওয়া হয়।

বিদ্যুৎ না থাকায় এক মাস ধরে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদে অনলাইনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের অনলাইন আবেদন চলছে; কিন্তু করতে পারছি না। ছবি তুলতে বা অনলাইন করতে তাদের নদী পার হয়ে ভিতরবন্দ বা নাগেশ্বরীতে যেতে হচ্ছে। এতে সময় যাচ্ছে, অর্থও ব্যয় হচ্ছে। আবার অনেকে সময়মতো যেতে না পারায় এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, বোঝা যায় তারের গুণগত মান ঠিক ছিল না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের নারায়ণপুর বাজার, ঢাকডহর, চৌদ্দঘুড়ি, বালারহাট, পাখিউড়া, পদ্মারচর বাজারসহ অনেক ছোট বাজার বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল অনেক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

প্রামাণিকপাড়ার ইব্রাহিম জানান, বিদ্যুৎ আসার পর মানুষের পরিবর্তন হয়েছে। যাদের বৈদ্যুতিক সোলার ছিল, তারা বিক্রি করে দিয়েছে। এখন অন্ধকারে তারা। কয়েক দিন আগে সেচ সংকটে পড়ে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে সেচ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া গরমে পাখা চালানোর সুযোগ না থাকায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উত্তর ঢাকডহর গ্রামের আবদুল লতিফ বলেন, বাচ্চাদের পড়াশোনা হচ্ছে না।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকারচর, চিড়াখাওয়ার চর, চর ভগবতীপুর, রলাকাটার চর, বড়ুয়ার চরেও একই অবস্থা।

রলাকাটার চরের বাসিন্দা মুনির হোসেন জানান, এক মাস ধরে তাদের কষ্টের সীমা নেই। ফারুক ও বাবু মিয়া জানান, চরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই।

পল্লী বিদ্যুতের কচাকাটা সাব জোনাল অফিসের এজিএম মো. শামসুল আলম বলেন, ‘একটি স্থানে কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। কেবলের ইনস্যুলেশন নষ্ট হয়ে গেছে।

এটা ন্যাচারাল (সাধারণ) কারণ। আমরা অন্য স্থানেও কেবল চেক করে পুরো সংযোগটি ত্রুটিমুক্ত নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে পানি বারবার বাড়ছে। ফলে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×