কর্ণফুলীর করাল গ্রাসে প্রাচীন জুট মিল

রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদীর ভাঙনে ধসে পড়ছে কর্ণফুলী জুট মিলের সীমানা দেয়াল সমকাল
মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ০৬:২৪
দেশের প্রাচীন ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী জুট মিল তীব্র নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত এই জুট মিলের প্রায় অর্ধ কিলোমিটার অংশে ভাঙন তীব্র। নদীতে ধসে পড়ছে সীমানাপ্রাচীর, বিলীন হয়েছে শ্রমিক কলোনির কয়েকটি ঘর। ফাটল ধরেছে তিন তলাবিশিষ্ট একটি অফিসার্স ভবনেও। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের অধীন ২৬টি মিলের মধ্যে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে এটি ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে লিজ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। বর্তমানে ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ৬০০ শ্রমিক। কারখানায় দুটি শিফটে দৈনিক ১৫ টন সুতা উৎপাদিত হয়; যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করা হয়। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে এই শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু নদীভাঙনের কারণে প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা হতাশ।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীপাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার অংশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত জুট মিলের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জুট মিল সীমানার বাইরে নদীর পাড়কেন্দ্রিক সড়কটির একাংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সীমানাপ্রাচীর ভাঙতে শুরু করেছে। কলোনিতে থাকা ৪০টি ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। শুধু জুট মিল অংশে নয়, কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে সরফভাটা ও বেতাগীতেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ জানান, দেশের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান এই পাটকল। পাটকলের দুই পাশে জেলেপল্লি রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, উভয় পাশে ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপিত হলেও ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না, বর্তমানে প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় জেলেপল্লির বাসিন্দা হরিপদ জলদাশ বলেন, ‘আগে জুট মিলের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে নদীর পাড় দিয়ে স্থানীয়রা চলাচল করতেন। চলতি বর্ষায় তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে পাঁচ মিনিটের পথ যেতে কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে আসতে হচ্ছে।’
মো. আসলাম নামে এক কর্মকর্তা জানান, নদীভাঙনের কবলে পড়া কারখানার তিন তলাবিশিষ্ট অফিসার্স ভবনে তিনিসহ থাকেন ১৫ জন কর্মকর্তা। সম্প্রতি ভবনটির একপাশে ফাটল দেখা দিয়ে অনেকটা দেবে গেছে। এতে তাদের আতঙ্কে দিন কাটছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি (পউর) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রীপুরা বলেন, ‘ইতিপূর্বে ভাঙন প্রতিরোধে এবং কর্ণফুলী ড্রেজিং কাজের বৃহৎ প্রকল্প থেকে বেঁচে যাওয়া ১১০ কোটি টাকা ফেরত না দিয়ে রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নির্দেশে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের একটি দল ভাঙনের কবলে পড়া এলাকা পরিদর্শন করেছে, এর মধ্যে জুট মিল এলাকাও আছে। বৃষ্টি কমলে সামনের মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপন কাজ শুরু হবে।’