খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ
ত্রিশালে চালের বদলে টাকা ধরিয়ে দিলেন ডিলার

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিতে অপেক্ষমাণ সুবিধাভোগীরা - সমকাল
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৬:৫৪ | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:০০
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নে ডিলারের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সদর ইউনিয়নের ডিলারের বিরুদ্ধে হয়রানি ও চালের বদলে টাকা নিতে বাধ্য করার অভিযোগ করেছেন সুবিধাভোগীরা।
জানা গেছে, ত্রিশাল উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে একযোগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এ কর্মসূচির আওতায় গত রোববার সদর ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিলার লুৎফুর রহমান ছলিমপুর গ্রামে সুবিধাভোগীদের মধ্যে চাল বিতরণ শুরু করেন। এসময় অনেক সুবিধাভোগীকে জোর করে সাক্ষর রেখে চালের বদলে টাকা নিতে বাধ্য করেন ডিলারের নিয়োজিত কর্মী হানিফ ও মানিক। অনেককে সোমবার চাল দেওয়া হবে জানিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বাড়ি ফেরত যাওয়া সুবিধাভোগিরা সোমবার সকালে উপস্থিত হন চাল নিতে। বেলা ১১টা বেজে গেলেও ডিলারের কোন লোকজন না আসায় ডিলারের বিরুদ্ধে হয়রানি ও জোর করে সই রেখে চালের বদলে টাকা নিতে বাধ্য হওয়া সুবিধাভোগীরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের কাছে অভিযোগ করেন। ইউপি চেয়ারম্যান বুধবার চাল দেওয়ার আশ্বাস দিলে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগীরা।
৭/৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৩ নং ওয়ার্ডের চিকনা মনোহর গ্রাম থেকে ছলিমপুরে আসা ষাটোর্ধ্ব আয়েশা খাতুনের ভাষ্যু চাল পাওয়ার আশায় চারদিন ধরে ঘুরছেন তিনি। অথচ রোববার চাল বিতরণ করতে দেখলেও এর দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীরা, ‘আজ চাল নেই, সব চাল আসেনি, আপনি চলে যান কাল আসবেন’ বলে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেহুইন ত বাবা, এইডা কোন কাম? সরহার আমগো অল্ফ টেহাই চাইল দে, আর এইনও বাটপারি। আমি বুড়া মানুষ আমারেও খালি ঘুড়ায়।’
একই অভিযোগ দিনমজুর আবুল হোসেন, রহিমা খাতুন, শাহনাজ পারভিন, আবদুল আজিজ, গোলাম মোস্তফা, শাহিদা বেগম, পারভিন, রিনা, জরিনা খাতুনসহ অনেকের।
১ নং ওয়ার্ডের কার্ডধারী মজিবুর রহমান মজনু জানান, দুই বস্তা (৬০ কেজি) চাল আনতে তাঁর স্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীরা চাল না দিয়ে তাঁর স্ত্রীর হাতে ৯০০ টাকা ধরিয়ে দিয়েছেন। অনেক সুবিধাভোগীকেই জোর করে সই রেখে চালের বদলে টাকা নিতে বাধ্য করেছে ডিলারের নিয়োজিত কর্মী হানিফ ও মানিক। পরে রাতেই বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাজারে চালের দাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের দামের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় তাদের চালের বদলে টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে দুই ভুক্তভোগী রাতে তাঁকে ফোন করে জানিয়েছেন। দুপুরের দিকে শতাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ নিয়ে তাঁর কাছে আসেন। ডিলারের সঙ্গে কথা বলে বুধবার চাল দেওয়ার আশ্বাস দিলে বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। হতদরিদ্রদের চাল কেনার দালাল হানিফ ও মানিকের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করা হবে বলে জানান তিনি।
তবে সুবিধাভোগীদের হয়রানি ও চালের বদলে টাকার দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডিলার লুৎফুর রহমান।
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ইলিয়াস আহমেদ বলেন, তিনি বিকেলে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।