ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

স্লুইসগেটে হারানোর পথে ১০ নদী

স্লুইসগেটে হারানোর পথে ১০ নদী

চারঘাট উপজেলায় বড়াল নদীর মুখে নির্মিত স্লুইসগেট - সমকাল

পুঠিয়া (রাজশাহী) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৬:৪৭

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পদ্মা নদীর শাখা বড়াল নদীর মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় পুঠিয়া উপজেলার ছোট-বড় অন্তত ১০টি নদীর বিলুপ্তি ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।   

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত শতকের আশির দশকে পাউবো চারঘাট উপজেলায় পদ্মার শাখা বড়ালের মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় নদীতে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এতে পুঠিয়া উপজেলার অধিকাংশ নদী-খাল ক্রমেই ভরাট যায়। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব নদী-খাল দখলে নিয়ে চাষাবাদ করছেন।

পুঠিয়া উপজেলার নদী গবেষক ডা. আব্দুল মালেক বলেন, ১৯৮৪ সালে এ অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ রাখতে বড়ালের মুখে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করে। সেই সঙ্গে ভারত তাদের গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার পর বাংলাদেশ অংশের পদ্মা নদীতে এর কিছু প্রভাব পড়েছে। এসব কারণে এক সময়ের গভীর খরস্রোতা বারইন, মুসা খাঁ, নারোদ, হোজা, রায়চাঁদ, নিশানিশি, আইচাঁদ, সোঁকা, সুন্দর, পাবলই ও সন্ধ্যা নদীতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এখন বারইন নদী বাদে উপজেলার বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি শুকিয়ে তা পর্যায়ক্রমে ভরাট হয়ে গেছে। তিনি জানান, উপজেলার ১০টি নদীর মধ্যে ৩টি পুনঃখনন করা হয়েছে। বিলুপ্তির পথে থাকা ৭ নদীর এখনও কিছু চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। এসব নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ফসলি ক্ষেত হিসাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী (পুঠিয়া) আল মামুন অর রশিদ বলেন, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খাল ও নদীর পানি সংরক্ষণ এবং সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীনে নারদ ও হোজা নদী দখলমুক্ত করে পুনঃখনন করা হয়। নদী দুটির প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকা খনন ও সংরক্ষণ কাজ করা হয়। এর আগে ২০০১ সালে ভরাট করা মুসা খাঁ নদী পুনঃসংস্কার করা হয়েছিল।

বানেশ্বর ইউনিয়নের শাহবাজপুর এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নদীগুলো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় তা ভরাট হয়ে গেছে। এখন অল্প বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি ও ফসল। আবার খরায় সেচ সমস্যায় ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না কৃষক।

পৌরসভা এলাকার রতন হালদার নামে একজন মৎস্যজীবী বলেন, আগে নদ-নদী ও খাল-বিলে বছরে বেশির ভাগ সময় পর্যাপ্ত পানি থাকত। এতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এলাকার শত শত জেলে সেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন নদী-নালা সব মরে শুকিয়ে গেছে। কোথাও আর মাছ পাওয়া যায় না। এ কারণে বেশির ভাগ জেলে মাছ ধরা ছেড়ে এখন অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু বলেন, বর্তমান সরকার নদ-নদী রক্ষা ও পুনঃসংস্কারের কাজ জোরদার করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ উপজেলায় কয়েকটি নদী দখলমুক্ত করে তা সংস্কার করা হয়েছে। আগামীতে বাকি নদীগুলো পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করে সংস্কার করা হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, অচিরেই সিএস রেকর্ড অনুযায়ী ভরাট ও দখলকৃত নদীগুলো চিহ্নিত করা হবে। এরপর সেগুলো উদ্ধারের কাজ শুরু হবে।

রাজশাহী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলোর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে দুই-তিনটি নদী পুনঃখনন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দ এলেই নতুন করে কিছু নদী সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু  স্লুইসগেটের কারণে বিভিন্ন নদী ভরাট হয়েছে এটি ঠিক নয়। পানির সঙ্গে আসা পলিমাটিও নদী ভরাটের কারণ।

এ বিষয়ে পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সাংসদ ডা. মনসুর রহমান বলেন, স্লুইসগেট নির্মাণের কারণে নাকি অন্য কোনো সমস্যার কারণে নদীগুলো মরে গেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি জানান, এ অঞ্চলের কিছু নদীর খনন কাজ করা হয়েছে। বাকি নদীগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×