ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পেঁয়াজ আসছে শত শত টন

পেঁয়াজ আসছে শত শত টন

সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম আবদুর রহমান, টেকনাফ

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০১৯ | ১৩:৩৬

ভারত রফতানি বন্ধ করলেও শত শত টন পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার থেকে। গতকাল বুধবারও ৫৮৪ টন পেঁয়াজ এসেছে টেকনাফ স্থলবন্দরে। এর আগের দু'দিনে এসেছে এক হাজার ১০০ টন। টেকনাফের নাফ নদে আরও ৮৪৩ টন পেঁয়াজ বোঝাই ট্রলার ভাসছে। আজ বৃহস্পতিবার এসব ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করা হবে। এদিকে টানা দু'দিনে ভোক্তাদের পকেট থেকে দশ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করে কিছুটা শান্ত হয়েছে পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে মুচলেকা দেওয়ার পর গতকাল দিনভর সেখানে আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। তবে খুচরা বাজারে এখনও পড়েনি দাম কমার এ প্রভাব। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য নিয়ে কারসাজি করা ব্যক্তিদের নজরদারিতে রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গত এক মাসে কোন আমদানিকারক কী পরিমাণ পেঁয়াজ এনেছেন এবং তাদের কাছ থেকে এসব পেঁয়াজ কারা কীভাবে কিনেছেন- সে তথ্য সংগ্রহ করছে তারা।

টেকনাফে পেঁয়াজ আমদানিকারকদের নিয়ে বৈঠকও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, 'পেঁয়াজ নিয়ে যারা কারসাজি করছে তাদের সবার তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা আমদানিকারক ও আড়তদারদের সতর্কবার্তা দিয়ে এসেছি খাতুনগঞ্জে। কম দামে কেনা পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করবেন না বলে মুচলেকাও দিয়েছেন তারা। গতকাল দিনভর নানা কৌশলে বাজার পর্যবেক্ষণও করেছি আমরা। আবার মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আসছে। এসবের প্রভাবে গতকাল দিনভর খাতুনগঞ্জের বাজার আগের চেয়ে অনেক স্বাভাবিক হয়েছে। ধীরে ধীরে বাজার আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বস্ত্র সেলের যুগ্মসচিব তৌফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের একটি টিম টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে যারা সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হবেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কম দামে কেনা পেঁয়াজ কম দামেই বিক্রি করতে হবে।

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল ৫৮৪ টন পেঁয়াজ এসেছে মিয়ানমার থেকে। এর আগের দু'দিন একই রুট দিয়ে আরও প্রায় এক হাজার ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। টেকনাফের নাফ নদে এখনও ভাসছে ২১ হাজার ৭৫ বস্তা পেঁয়াজ। পাইপলাইনে আছে আরও প্রায় ৮০০ টন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও পেঁয়াজ আসছে তুরস্ক এবং মিসর থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অঞ্চলের হিসাব অনুযায়ী, দুই হাজার টনেরও বেশি পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এসব পেঁয়াজ আসবে চট্টগ্রাম বন্দরে। এদিকে পেঁয়াজ আমদানি উৎসাহিত করতে সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এ নির্দেশনা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

কে আনলেন কত পেঁয়াজ :গতকাল মিয়ানমার থেকে আসা ৫৮৪ দশমিক ৭৩২ টন পেঁয়াজের মালিক আট থেকে দশজন ব্যবসায়ী। দিনে দিনে আমদানি করা সব পেঁয়াজ খালাস হয়ে চলে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গতকাল আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে এমএ হাশেমের ১০০ টন, যদু চন্দ্র দাসের ১১৮, মোহাম্মদ জব্বারের ৭৯ দশমিক ৩৮২, মোহাম্মদ সাদ্দামের ৫৯ দশমিক ৮৮০, মোহাম্মদ কামালের ৫৯ দশমিক ৮৮০, মোহাম্মদ কাদেরের ৭৯ দশমিক ৯৫০, মোহাম্মদ শুক্কুরের ২৬ ও মোহাম্মদ কামরুলের ৫৯ দশমিক ৮৮০ টন রয়েছে। এখনও প্রায় ৮০০ টন পেঁয়াজ আসার অপেক্ষায় আছে মিয়ানমার থেকে। বুকিং দেওয়া এসব পেঁয়াজের মালিকও ঘুরেফিরে এই আট থেকে দশ ব্যবসায়ী। মিয়ানমার থেকে এককভাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পেঁয়াজ এনেছেন এমএইচ ট্রেডিংয়ের মোহাম্মদ হাশেম। তিনি একাই দেড় হাজার টনেরও বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। মোহাম্মদ হাশেম বলেন, দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনছি আমরা।

দু'দিনে খাতুনগঞ্জে বাড়তি মুনাফা ১০ কোটি টাকা :চট্টগ্রামের পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে আগের দিনের চেয়ে গতকাল কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। মঙ্গলবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালানোর সময় কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এটি পুরোপুরি না মানলেও আগের চেয়ে কমে পেঁয়াজ বেচাকেনা হয়েছে। তবে পেঁয়াজ বিক্রির হার অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় ছিল অনেক কম। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াসকে দিনভর টেলিফোনে বাজার পরিস্থিতি জানিয়েছে আড়তদার মালিক সমিতি। তাই জেলা প্রশাসক একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দিয়ে ফের অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে সেখান থেকে সরে আসেন। বিকল্প একটি টিম পাঠান তিনি রিয়াজউদ্দিন বাজারে। এ বাজার মনিটরিং করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা আক্তার সুমি। তিনি বলেন, 'খাতুনগঞ্জের বাজার আগের দিনের তুলনায় অনেক স্বাভাবিক ছিল। তাই খুচরা বাজারে সেটির প্রভাব পড়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখছি আমরা। অনেক ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেছি। চিত্র না পাল্টালে পরে আরও কঠিন হবো আমরা।'

আরও পড়ুন

×