ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রাবাসে হামলা, নেই মামলা-আটক

রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রাবাসে হামলা, নেই মামলা-আটক

বহিরাগতদের হামলার পর রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রাবাস। ছবি-সমকাল

ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৪ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২২:৪৪

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্রাবাসে স্থানীয় বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোন অভিযোগ দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিকে হামলার ঘটনার পর প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কবি জসীমউদ্দিন ছাত্রবাসের নিবাসীরা।

ওই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বহিরাগতের দ্বারা তারা মাঝে মাঝে নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া রাত নামলেই ছাত্রাবাস সংলগ্ন কলেজর মাঠে বসে মাদকের আড্ডা।  চলাফেরা করার সময় উত্যক্ত করা হয়। ছিনতাইয়ের শিকার হন। প্রতিনিয়ত ঘটে চুরির ঘটনা। ছাত্রাবাসের বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। খাওয়ার পানির জন্য যে টিউবওয়েল রয়েছে তার মাথা চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রাবাসের সুপার ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে এ কথা জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। পাশাপাশি ভবনটি ভগ্নদশা অবস্থায় রয়েছে। অন্য ছাত্রাবাসগুলো সংস্কার করা হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে এ ছাত্রাবাস সংস্কার করা হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের বাইতুল আমান এলাকায় অবস্থিত সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স শাখার কবি জসীম উদ্দীন হলে বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটে। মাঠে ফুটবল খেলার সময় ছাত্রদের একটি বল এলাকার কলেজের একই মাঠে তরুণদের খেলার জায়গায় ঢুকে গেলে সেটি জব্দ করে এলাকাবাসী। এ নিয়ে তর্কের জেরে এলাকার ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ছাত্রাবাসে ঢুকে তিন তলা বিশিষ্ট ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ভাঙচুর করে। এ ঘটনার ৮ থেকে ১০ ছাত্র আহত হয়। এর মধ্যে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে আহত তিনজনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকে লোকালয়ের কাছে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে কবি জসীম উদ্দীন হল। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় গত ১৯৯০ সালে স্থাপিত তিনতলা বিশিষ্ট এ ছাত্রাবাসটি ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। তিনতলার বিভিন্ন কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

এ ছাত্রাবাসে মোট ৪৮ জন শিক্ষার্থীর আবাসনের সুযোগ রয়েছে। তবে ভগ্নদশার কারণে গড়ে ৩০ জন শিক্ষার্থী বসবাস করেন। গত বুধবার দিবাগত রাতে এ ছাত্রাবাসে ১৮ জন নিবাসী ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের নীচতলায় ১০২ ও ১০৩ এবং দোতলার ২০২ এবং কমনরুমে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। জানলার কাচ ভেঙ্গে নিচে পড়ে আছে। কমনরুমের আসবাব পত্র ভাঙ্গা ও তছনছ অবস্থায় রয়েছে। টেলিভিশনটি উল্টে পড়ে আছে।

সীমানা প্রাচীর না থাকায় ওই ছাত্রাবাসটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। যখন তখন ইচ্ছে করলেই বহিরাগতরা ঢুকে যেতে পারে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বহিরাগতদের হামলার পর তারা রাতটি চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে কাটিয়েছে। ছাত্রাবাসের ফটকের কলাপসিবল গেটে জং লেগে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। এ ছাত্রাবাসে বহিরাগতদের ঢুকে চুরি ও ছিনতাই করা একটি সাধারণ বিষয়। রাতে ক্যাম্পাসে হাটাচলার সময় শিক্ষার্থীদের ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, আমরা বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি। কিন্তু এ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকায় তাদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা বলেন, হল সুপারকে বাদী হয়ে এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে।

হল সুপার জালাল হোসেন বলেন, তিনি ভাইভার বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দিতে পারিনি। তবে তিনি অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, বহিরাগতদের হামলায় আট থেকে দশ জন ছাত্র আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে মামলা দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×