ভূমিহীনদের জমিতে আশ্রয়ণের ঘর

ফাইল ছবি
এম এ এরশাদ, ডুমুরিয়া (খুলনা)
প্রকাশ: ০২ মে ২০২৩ | ১৮:০০
৩১ বছর আগে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সরকারি খাসজমি। পরে তাঁদের নামে রেকর্ড হয়েছে। তবে সে জমি ফিরিয়ে না নিয়ে বা না কিনে গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। এ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন। ভূমিহীন ও গৃহহীন অনেক পরিবার বুঝে পাচ্ছে না দলিল।
আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন ও খর্নিয়ার চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন জানান, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে, খাস জায়গায় অথবা জমি কিনে ঘর নির্মাণ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসন তা অনুসরণ করেনি। ব্যক্তি রেকর্ডীয় জমিতে প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে নতুন ভূমিহীন-গৃহহীনরা জমির দলিল পাচ্ছে না। এতে পরিবারগুলো বিপদে আছে।
চেয়ারম্যানের কথার সত্যতা পাওয়া গেল কাঁঠালতলা-বরাতিয়া গ্রামের সুফল দাস, খোকন দাস, অয়েজ মোড়ল, আহম্মদ মোড়ল, আবদুল মান্নান শেখ ও আবদুল বারিক সরদারের কথায়। তাঁরা জানান, ১৯৯২-৯৩ ও ১৯৯৫-৯৬ সালে ভূমিহীন হিসেবে ৫০ থেকে ৭৫ শতক করে খাসজমি পেয়েছিলেন তাঁরা। এখন তাঁরা রেকর্ডীয় মালিক। এতে বসতবাড়ি, কৃষি ও মৎস্য খামার রয়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে ইউএনও জমি ফেরত চাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা দেবেন না।
ইউএনওর দপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০১৮ ও ২০২২ সালে ডুমুরিয়ায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনে পৃথক তিনটি প্রকল্পের আওতায় ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় ৭১৫টি ঘর নির্মাণ করে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে প্রথম পর্বে সাহস, কাঁঠালতলা ও সাজিয়াড়া গ্রামে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় ১৪০টি, দ্বিতীয় পর্বে কাঁঠালতলা, রামকৃষ্ণপুর, বরুনা, ভান্ডারপাড়া ও বাহাদুরপুর-শোভনায় ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ৫০০টি ও তৃতীয় পর্বে চুকনগর, খাজুরা ও আমভিটায় ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় ৭৫টি ঘর করা হয়েছে।
বয়ারশিং ও শোভনা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন ও মো. ইমাম হোসেন বলেন, কাঁঠালতলা, বরাতিয়া, বাহাদুরপুর ও শোভনায় যে প্রকল্প হয়েছে, এ জমির আরএস খতিয়ান নম্বর ৮২, ১০১, ১০৩ ও ৪৯৯, যা ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ডীয়। সরকারি খাসজমি ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায় কমিটির সভাপতি ইউএনও, সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা প্রকৌশলী। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সদস্য। এর মধ্যে ধামালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম ও আটলিয়ার ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মুন্না বলেন, আত্মীয় ও দলীয়করণের কারণে প্রকৃত ছিন্নমূল ও ভূমিহীনরা ঘর পাননি। ঘর বরাদ্দ নিয়ে অনেকে বসবাস করছেন না, তালা ঝুলছে।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা মনোরঞ্জন সরদার, বাহারুল গাজী, জুলেখা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, বাদুরগাছা, বরুনা পশ্চিমপাড়া, রংপুর, রামকৃষ্ণপুর ও বাহাদুরপুর-শোভনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪২৭টি ঘরের ১০৭টিতে কেউ বসবাস করছে না। একাধিক ঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। রং করা হয়নি, জানালা-দরজা ফিটিং হয়নি। অর্ধশতাধিক ঘর অসমাপ্ত আছে।
প্রকল্পে বিদ্যুৎ, টিউবওয়েল, পুকুর ও যাতায়াত ব্যবস্থাও নেই। গরমে শিশু ও বয়স্করা বিপদে রয়েছেন। খাবার পানির সংকটে ভোগান্তি বেড়েছে। এমন অভিযোগ বরাতিয়া অশ্রয়ণ প্রকল্পের মুক্তার আলী গাজী, ছালিমা বেগম, আল-আমিন, মঞ্জুয়ারা বেগম, সিরাজুল ও মুক্তা খাতুনের।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজ শাহিন খসরু, উপজেলা প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফ হোসেন বলেন, প্রকল্প নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে তেমন আলোচনা হয় না। ফলে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মুশকিল।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, এক সময় সরকারি জমি ভূমিহীনদের বরাদ্দ দেওয়া হলেও তাঁরা শর্ত ভঙ্গ করায় দলিল বাতিল করা হবে। সেখানে আশ্রয়ণের ঘর হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য আগের ভূমিহীনদের কাছ থেকে কিছু জমি ফেরত নেওয়া হচ্ছে। জোর করে নয়, তাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দিচ্ছেন। আগামী জুনের মধ্যে জমি ও ঘর নিয়ে সমস্যার সমাধান হবে।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম মুনিম লিংকন বলেন, ব্যক্তিমালিকানার জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।