দুই কয়েদিতে চট্টগ্রাম কারাগারে কৌতূহল

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০০:০৯
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই কয়েদিকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকছেন তারা। তাদের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী জাবেদ ইকবাল ২৪৩ বছর এবং অর্থ আত্মসাতের মামলায় ইস্টার্ন ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ম্যানেজার ইফতেখারুল কবির ১৮৯ বছর সাজা ভোগ করছেন। সাজা বেশি হওয়ায় কারাগারই হতে যাচ্ছে তাদের শেষ ঠিকানা।
জাবেদের বর্তমান বয়স ৪১ ও ইফতেখারুলের ৩৯ বছর। দুই কয়েদি প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, তারা বেশ কিছু মামলায় পৃথক সাজা পেয়েছেন। এসব সাজা পরপর ভোগ করতে হবে। একত্রে গণনার বিষয়ে রায়ে কিছু বলা হয়নি।
জাবেদের ১৯ মামলা
জেএমবির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সামরিক কমান্ডার জাবেদ ইকবালকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাঙামাটিতে দায়ের করা ১৯টি মামলায় ২৪৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সর্বশেষ চট্টগ্রাম আদালতে বোমা হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জাবেদের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুস্কুল এলাকায়। চট্টগ্রাম কারাগারে ৪৪ জন জঙ্গি বন্দি। তাদের মধ্যে বেশি সাজা হওয়া কয়েদি তিনি।
১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠনের পর জঙ্গিবাদে জড়ান জাবেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ছাত্র থাকা অবস্থায় বিপথগামী হন। ১৯ বছর বয়সে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০০৫ সালে দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর জাবেদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়। ২০০৬ সালে প্রথম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার মামলায় ২০ বছর, একই বছর কক্সবাজারের মামলায় ১৪ বছর, ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার মামলায় ২৬, কোতোয়ালি থানার আরেকটি মামলায় ৩০, হালিশহর থানার মামলায় ১০, খুলশী থানার মামলায় ১০, ডবলমুরিং থানার মামলায় ১০, কোতোয়ালি থানার আরেক মামলায় ১০ বছর, ২০০৯ সালে পাঁচলাইশ থানার মামলায় ১০, বাকলিয়া থানার মামলায় ১০, পাহাড়তলী থানার মামলায় আট, কোতোয়ালি থানার আরেক মামলায় ১০, কক্সবাজারের মামলায় পাঁচ, পাহাড়তলী থানার একটি মামলায় ২০ বছর, ২০১০ সালে পাহাড়তলী থানার মামলায় তিন বছর, ২০১৬ সালে রাঙামাটি সদর থানার মামলায় ১০, চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার মামলায় যাবজ্জীবন তথা ৩০ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া আটটি মামলায় তাকে ২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৭ বছর ৯ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ব্যাংক কর্মকর্তার ১৮৯ বছর জেল
ইস্টার্ন ব্যাংকের চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও শাখার প্রায়োরিটি ম্যানেজার ছিলেন ইফতেখারুল কবির। ম্যানেজার থাকার সময় ১৩ জন গ্রাহকের ২০ কোটি টাকা ভুয়া এফডিআর দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। ইফতেখারসহ অর্থ আত্মসাৎ চক্রের একডজন সদস্যের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করে দুদক। ছয়টি মামলায় তার ১৮৯ বছর কারাদণ্ড হয়। ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের এক মামলায় তাকে ৫৪ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাঁচ মামলায় তার ২৬ বছর, ২৭ বছর, যাবজ্জীবন তথা ৩০ বছর, ২১ বছর এবং ৩১ বছর কারাদণ্ড হয়েছে।
নগরের চান্দগাঁওর বাসিন্দা প্রতারণার শিকার মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘বিদেশে যা আয় করেছিলাম তা দিয়ে আমার নামে এবং দুই মেয়ে ও ছেলের নামে ১১টি স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করি। ২০১৫ সালে এফডিআর খোলার সময় কৌশলে কয়েকটি চেকে সই নিয়ে নেন ম্যানেজার ইফতেখারুল। অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার ফরমেও সই নেন। পরে চক্রটি এফডিআরের ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। ইফতেখারুলের কঠোর শাস্তি হওয়ায় আমি খুশি।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এমরান হোসেন মিঞা বলেন, জাবেদ ৬৪ নম্বর সেলে বন্দি। তাকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তার নামে চট্টগ্রামে আর কোনো মামলা নেই। এ ছাড়া দণ্ডিত ইফতেখার ওয়ার্ডে বন্দি।