ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হিমাগারে এখনও আছে পর্যাপ্ত আলু কৌশলী মজুতদার

হিমাগারে এখনও আছে পর্যাপ্ত আলু কৌশলী মজুতদার

ফাইল ছবি

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৩৫ | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৩৫

বগুড়ার হিমাগারগুলোতে ২৭ টাকা কেজিতে আলু বিক্রির নোটিশ ঝুললেও আদতে কেনাবেচা হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায়। এ নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ক্যাশমেমো দেওয়া হচ্ছে ২৭ টাকার, তবে দাম নেওয়া হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা করে। হিমাগার থেকে আলু কিনে তা খুচরা ব্যবসায়ীরা হাটবাজারে বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।

বগুড়ার সবচেয়ে বেশি হিমাগার শিবগঞ্জে। সেখানকার ১৫ হিমাগারে এখন আলু মজুত আছে ৬০ হাজার ১১৬ টন। হিমাদ্রী, নিউ শাহ সুলতান, এএইচজেড কোল্ডস্টোরেজসহ সব হিমাগারে আলু ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সাহা লিমিটেড ও হিমাদ্রী লিমিটেড হিমাগারে অভিযান চালায় প্রশাসন। অভিযানে তিন মজুতদারের ৬৭৫ বস্তা আলু পাওয়া যায়। এর মধ্যে সাহা লিমিটেডের হিমাগারে পরিতোষ কুমারের কাছে ১৯০ বস্তা, অর্জুন সরকারের কাছে ২৮৫ ও হিমাদ্রী লিমিটেড হিমাগারে আফজাল হোসেনের কাছে ৩০০ বস্তা আলু মেলে। তাৎক্ষণিকভাবে মহাস্থানহাটের ৯ পাইকারি ব্যবসায়ীকে ডেকে মজুত আলু সাড়ে ২৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। সাড়ে ২৮ টাকায় কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা মহাস্থানহাটে ৩৩ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেন। ওই একদিনেই সেখানে অভিযান চলেছিল।

নিউ শাহ সুলতান হিমাগারের মালিক জেলা ও হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাইনবোর্ডে যা লেখা আছে, সে দামেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে। কিছু লোক অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ মৌসুমে বগুড়ার ৪২ হিমাগারে আলু মজুত করা হয়েছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬২০ টন। গত জুলাই পর্যন্ত আলু বের করা হয় মাত্র ১ লাখ ২২ হাজার টন। অথচ বাজারে প্রতি মাসে আলুর চাহিদা ৪৪ হাজার টন। বাজারে আলুর সংকট দেখা দেওয়ায় জুলাইয়ের শেষের দিকে একলাফে ৩০ টাকার আলু ৫০ টাকায় ওঠে। অভিযোগ আছে, এ সংকট তৈরি করে আলুর মজুতদার ও হিমারগার মালিকরা। এক পর্যায়ে ভোক্তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় ৩৬ টাকা। নির্ধারিত দামে আলু বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গত ১৯ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় সফরে এসে আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য ২৭ টাকা আলুর দাম নির্ধারণ করে দেন। আর বাজারে বিক্রির জন্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেন। 

জানা গেছে, হিমাগারগুলোতে এখনও আলু মজুত আছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। এর মধ্যে ৪০ টন বীজ আলু। এই আলু হিমাগার থেকে বের করা হচ্ছে ধীরগতিতে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছে না। আর নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করবে ডিসেম্বরের শুরুতে।

রাজাবাজার ব্যবসায়ী ও আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, বগুড়ার সব হাটবাজারে ৩৬ টাকা দরে আলু বিক্রি করা সম্ভব নয়। শহরের রাজাবাজারে ৩৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে আলুর কোনো ঘাটতি নেই।

জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকারের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, হিমাগারে কারা আলু মজুত করেছে, তাদের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে না। তালিকা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, আলু দ্রুত হিমাগার থেকে বের করে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন

×