লোভনীয় বিজ্ঞাপনে রমরমা অনলাইন প্রতারণা

প্রতীকী ছবি
শামীমূল ইসলাম, নড়াইল
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭:৩৫ | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭:৩৫
ফেসবুকে অনবরত ঘুরছে পণ্যের বিজ্ঞাপন। দামি ফোন কম দামে বিক্রির অফার দেখে ম্যাসেঞ্জারে দিলেন ‘নক’। কথোপকথনের এক পর্যায়ে পণ্যটি কিনতে রাজি হলেন গ্রাহক। চুক্তি হলো পণ্য হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করবেন।
তবে পণ্য সরবরাহ খরচসহ অগ্রিম কিছু টাকা পাঠাতে হবে। টাকা নেওয়ার পর দিল ‘ব্লক’। এভাবেই চলছে অনলাইন প্রতারণা।
সম্প্রতি অনলাইন প্রতারণার অভিযোগে নড়াইলে কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই কিশোর-যুবক। স্কুল-কলেজে না গিয়ে অনলাইন অপরাধ জগতে জড়িয়ে যাচ্ছে তারা।
অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ সর্বশেষ মঙ্গলবার নড়াইল গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন নাঈম গাজী (২৫) ও মো. হাবিবুল্লাহ (২৫)। তারা কালিয়া উপজেলার পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা।
নাঈম, হাবিবুল্লাহসহ একটি চক্র ‘ডিএসএলআর ক্যামেরা বাজার স্টোর’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে লোভনীয় ছাড়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। সদর থানায় একটি অনলাইন প্রতারণা মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১০টি মোবাইল ফোন এবং ২১টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশের তথ্যমতে, নড়াইলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ফেসবুক পেজ খুলে কম দামে দামি পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে কালিয়া উপজেলার পাঁচগ্রাম, পেড়লি, চাঁচুড়ী, পুরুলিয়া ও সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নে এমন ঘটনা বেশি। টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে অনেকে পাকা, আধাপাকা বাড়ি, দামি আসবাব ও মোটরসাইকেলের মালিক হচ্ছেন। এই প্রতারণায় বেশি জড়িত ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষ।
কথা হয় পেড়লি ইউনিয়নের পেড়লি গ্রামের সাব্বির হোসেন, খড়রিয়া গ্রামের রনি শেখ, জামরিলডাঙ্গা গ্রামের মো. ফেরদৌস ও পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামের আসমাউলের সঙ্গে। এই তরুণদের দাবিু পেড়লি, পাঁচগ্রাম, পুরুলিয়া এলাকার হাজারের বেশি তরুণ অনলাইন প্রতারণায় জড়িত। এলাকার অনেক যুবক রাতারাতি মোটরসাইকেল ও লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। ৩-৪ জন পাকা ভবনও করছেন। তবে তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তারা।
অনলাইন প্রতারণার শিকার রাজু শেখ (২৪) সদর উপজেলার শেখাটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে ঢাকার একটি ঠিকানা ব্যবহারকারী ফেসবুক পেজে মোবাইল ফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে অর্ডার দিই। তখন ডেলিভারি চার্জ হিসেবে অগ্রিম ৫০০ টাকা নেয়। পরে সাত হাজার টাকা দিই। পণ্যতো দেয়নি বরং ফোন নম্বরই বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার পর সদর থানায় মামলা করি।’
এ বিষয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পলাশ ঘোষ জানান, প্রতারক সন্দেহে গত ২ আগস্ট পেড়লি ইউনিয়নের বিকাশ ব্যবসায়ী এনায়েত কবির, পুরুলিয়া ইউনিয়নের রিপন ও চাঁচুড়ি ইউনিয়নের রাব্বিকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে এনায়েত জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
জেলা ডিবির উপপরিদর্শক আলী হোসেন বলেন, প্রথমে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুই নারীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় দুটি মামলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিল। অন্যান্য জেলা থেকেও নড়াইলের অনেকের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। আসামিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ তাসমীম আলমের ভাষ্য, ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী অগণিত মানুষ এই অপরাধে যুক্ত।
পুলিশ সুপার মোসা. সাদিরা খাতুন বলেন, ‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
- বিষয় :
- ফেসবুক
- অনলাইন প্রতারণা