ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

রামু সরকারি কলেজ

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:০৬ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:০৬

কক্সবাজারের রামু সরকারি কলেজে গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের দাবি, সর্বসাকল্যে ৪০ হাজার টাকাও খরচ না হলেও খরচ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। শুধু ওই অনুষ্ঠানই নয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রসিদে বিভিন্নভাবে টাকা আদায় ছাড়াও অসংখ্য ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে কলেজ ফান্ডের অন্তত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ (সহযোগী অধ্যাপক) মুজিবুল আলমের বিরুদ্ধে।

২০২২ সালের ৮ আগস্ট রামু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মুজিবুল আলম। কলেজ সংশ্লিষ্টরা জানান, অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেওয়ার পর মজিবুল আলম তাঁর পছন্দের কিছু শিক্ষকের নামে অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি এমন প্রকল্প দেখিয়েছেন; যার প্রায় সবগুলোতে হিসাবের নানারকম অসংগতি রয়েছে। গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রতিম বড়ুয়া ও পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছলিম উল্লাহর নামে দেখানো হয়েছে ১৫টি করে প্রকল্প। যেখানে হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। 

অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে সুপ্রতিম বড়ুয়া বলেন, ‘আমার বেশির ভাগ প্রকল্পের কাজ করেছেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ হোছাইন। আমি শুধু চেক এবং ভাউচারে স্বাক্ষর করেছি। হিসাব ভালোভাবে না দেখে স্বাক্ষর করাটা উচিত হয়নি।’ একইভাবে ২০২২ সালের অক্টোবরে দ্বাদশ শ্রেণির শির্ক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে খরচের হিসাবেও বড় ধরনের অসংগতির প্রমাণ মিলেছে।

বিভিন্ন কাজে অনিয়মের জন্য অধ্যক্ষকে দায়ী করে একটি প্রকল্পের আহ্বায়ক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান বলেন, ‘আমরা কাগজে-কলমে আহ্বায়ক। আমার নামে চেক ইস্যু এবং চেকে স্বাক্ষর নেওয়ার পর একটি টাকাও আমি চোখে দেখিনি। অধ্যক্ষ নিজেই সব খরচ করেছেন। পরে বিল ভাউচারে বড় ধরনের অসংগতি দেখার পর আমি পরপর দুই দিন স্বাক্ষর না করে ফিরিয়ে দিই। তৃতীয় দিন অধ্যক্ষ ফের অনুরোধ করলে তখন আমি স্বাক্ষর করেছি।’

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মজিবুল আলম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর কলেজের এইচএসসি, ডিগ্রি ও অনার্স পর্যায়ে অন্তত এক হাজারের বেশি  শিক্ষার্থী পাস করেছে। তাদের কাছ থেকে বিনা রসিদে প্রশংসাপত্র বাবদ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আর প্রত্যয়নপত্র বাবদ ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। একইভাবে এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিনা রসিদে মোটা অঙ্কের জরিমানার টাকা নিয়ে কলেজ ফান্ডে জমা না করে অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। একইভাবে ভর্তি বাতিল, ট্রান্সফারসহ কয়েকটি খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন অনেকে।

কলেজের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, এ কাজগুলো এক সময় আমরা করতাম। কিন্তু নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর বিষয়গুলো কয়েকজন কর্মচারীর মাধ্যমে তিনি নিজেই তদারকি করেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম বলেন, ‘সব প্রকল্পেই আহ্বায়ক আছে, একাধিক সদস্য আছে। তাঁরা টাকা খরচ করে, বিল ভাউচার স্বাক্ষর  করে আমাকে জমা দিলে আমি অনুমোদন করি।’ তবে ফান্ডের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিজের কাছে রাখার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

আরও পড়ুন

×