ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

তেতো করলায় মিষ্টি হাসি

তেতো করলায় মিষ্টি হাসি

প্রতীকী ছবি

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২০:৫৮ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২০:৫৮

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের চাষি জুলি মুহাম্মদ এ বছর ২ বিঘা জমিতে দেশি ও উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের করলা চাষ করেছেন। বীজ কেনা থেকে মাচা তৈরি এবং শ্রমিকের মজুরি দিয়ে তাঁর বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এই জমি থেকে প্রথম মাসেই এক লাখ ১০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেছেন। আরও লক্ষাধিক টাকার করলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তাঁর। 

শুধু জুলি মুহাম্মদ নন; মেহেরপুরে করলা চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। এখানে উৎপাদিত করলা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাচ্ছে। 

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সবজি জেলাখ্যাত মেহেরপুরে এবার ৪৫৭ হেক্টর জমিতে করলার চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার টন। এ জেলায় উৎপাদিত সবজির মধ্যে জনপ্রিয় ও অর্থকরী হিসেবে পরিচিত করলা। তেতো হলেও স্বাস্থ্যকর এ সবজি চাষে অনেকেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। ভালো লাভ হওয়ায় অনেকেই করলা চাষে ঝুঁকছেন। মাস দেড়েক আগে থেকে এখানে করলা তোলা শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে বিভিন্ন জেলায় করলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষক।

ভাদ্র-আশ্বিন মাসে করলা চাষ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। অতিবর্ষণে জমিতে পানি জমে গেলে গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বছর বৃষ্টিপাত অনেক কম। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষক ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। তবে করলা যখনই বাজারজাত করার উপযুক্ত হচ্ছে, দেরি না করে বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।  

মুজিবনগর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের করলা চাষি আব্দুস সালাম বলেন, এ বছর বিঘাপ্রতি ১০০ থেকে ১৩০ মণ করলা তোলা যাবে বলে আশা করছেন। বর্তমান দরে বিক্রি করতে পারলে খরচ বাদেই বিঘাতে ৮০-৯০ হাজার টাকা লাভ থাকবে। সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের করলা চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, করলার রোগবালাই খুবই কম। কোনো কোনো সময় বৈরী আবহাওয়ায় গাছ শুকিয়ে যাওয়া অথবা পচন রোগ দেখা দেয়। কৃষি বিভাগের পরামর্শে রোগ বুঝে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে পারলে সুফল পাওয়া যায়। লাভজনক হওয়ায় আগামী বছর তিনি চার বিঘা জমিতে করলা চাষের পরিকল্পনা করছেন। 

মেহেরপুর পৌর মার্কেটের কাঁচামালের আড়তদার মিজানুর রহমান মিজান বলেন, কৃষকরা আড়তে করলা আনার সঙ্গে সঙ্গেই পাইকাররা কিনে বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে করে পাঠাচ্ছেন। পাইকারি হাইব্রিড করলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি করলার দাম একটু বেশি। ভালোমানের হলে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। খুচরা সবজি বিক্রেতারা এর থেকে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-মেহেরপুরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সামছুল আলম বলেন, মেহেরপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এ এলাকায় ধান, গমের পাশাপাশি প্রায় সব ধরনের সবজির চাষ হয়। তিন-চার বছরের মতো এবারও করলা চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। শুরুতে পরীক্ষামূলক অল্প জমিতে করলা চাষে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন এতে ঝুঁকছেন কৃষক। এ কারণে আমরাও কৃষকদের অন্য সবজির পাশাপাশি করলা চাষে উৎসাহ দিচ্ছি। 

আরও পড়ুন

×