নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ৭ বছর
বিচার হয়নি, আসামিরা আ’লীগের ছত্রছায়ায়

নাসিরনগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রায়হান আলী ভূইয়াকে কোলে নিয়ে সম্প্রতি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামি সুরুজ আলী। ছবি: সমকাল
আবদুন নূর ও মুরাদ মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ০৪:১৪
ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের আটটি মামলার সবগুলোতেই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৬ মার্চ একটিতে সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অন্য সাত মামলার বিচারকাজ চলমান আছে। তবে আসামিদের অধিকাংশই আছে জামিনে। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় ঘোরাফেরা করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। একই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা।
উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্থিরচিত্র সমকালের কাছে আছে। এসব ছবিতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতার পাশে বসে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অভিযুক্ত অনেক আসামিকে। এর মধ্যে একটি চিত্রে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রায়হান আলী ভূঁইয়াকে কোলে তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামি ও চাপড়তলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজি সুরুজ আলীকে। অপর একটি ছবিতে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজির মিয়ার পাশে বসে উঠান বৈঠক করতে দেখা গেছে অপর আসামি শেখ আবদুল আহাদকে। আরেকটি চিত্রে একটি সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন যুবলীগ নেতা রায়হান। আর তার পাশে বসে আছেন সুরুজ আলীসহ একাধিক আসামি।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রায়হান বলেন, আমি জানি সুরুজ আলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি কোনো মন্দির ভাঙচুর মামলার আসামি কিনা জানা ছিল না। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। আসলেই তিনি অভিযুক্ত হলে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁকে রাখা হবে না।
উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মিহির কুমার দেব বলেন, কার কাছে বিচার দেব। যারা বিচার করবে তারাই তো আসামিদের নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। হামলার সাত বছরেও বিচার পাইনি, মৃত্যুর আগে পাব কিনা তা নিয়ে সংশয় ক্রমেই বাড়ছে। আসামিদের প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরতে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। উপজেলার গৌর মন্দিরে হামলার ঘটনায় মামলার বাদী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল চৌধুরী বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি মন্দিরে হামলার সঙ্গে জড়িত অনেকেই নৌকা মার্কার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সভা-সমাবেশ করছেন। নৌকা মার্কার দল অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় বিশ্বাস করলেও এসব দেখতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার পশ্চিম পাড়ায় একটি মন্দিরে হামলা মামলার সাক্ষী অনাথ বন্ধু দাস বলেন, সময় তো আর কম হলো না। হামলার ঘটনার পর সাত বছর পার হয়ে গেছে। এখনও একটি ছাড়া কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা চাই, দ্রুত মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হোক। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ নাগ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি রোধে চলমান মামলাগুলোর দ্রুত সুষ্ঠু নিষ্পত্তির দাবিসহ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত পরিদর্শক কাজী দিদারুল আলমের কাছে এসব মামলার বিচারকাজের ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার অনীহাকে প্রধান কারণ বলে মনে করেন।