ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

পটুয়াখালী-৪ আসন

স্বতন্ত্র প্রার্থী দুই আ’লীগ নেতা নৌকা ডোবাতে মরিয়া

স্বতন্ত্র প্রার্থী দুই আ’লীগ নেতা নৌকা ডোবাতে মরিয়া

ফাইল ছবি

পটুয়াখালী ও কলাপাড়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০২:৫৮

পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে নৌকা ডোবাতে মরিয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের একজন হচ্ছেন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদার এবং অন্যজন সাবেক এমপি আনোয়ার-উল ইসলামের ছেলে দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক আবদুল্লাহ আল-ইসলাম লিটন। তারা নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান এমপি মহিব্বুর রহমান মহিবের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এতে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে দলের তৃলমূলের নেতাকর্মী এখন ত্রিধারায় বিভক্ত। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন যদি মাহবুব তালুকদারকে সমর্থন দেন তাহলে নৌকার প্রার্থী মহিবের অবস্থান আরও নড়বড়ে হয়ে যাবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মী।

জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার, সিনিয়র সহসভাপতি ড. শহিদুল আলম বিশ্বাস, কলাপাড়ার পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক দিদার উদ্দিন মাসুম, রাঙ্গাবালী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুন খান, কুয়াকাটা পৌর সভাপতি আবদুল বারেক মোল্লাসহ দলের দুই উপজেলা নেতাকর্মীর একাংশ নৌকার প্রার্থী মহিবের পক্ষে রয়েছে।

অন্যদিকে কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, কলাপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল ইসলাম লিটু, যুবলীগের সাবেক সভাপতি কবির হোসেন তালুকদারসহ অন্য অংশ রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব তালুকদারের পক্ষে।

এ ছাড়া দুই উপজেলায় নেতৃস্থানীয় কেউ না থাকলেও দলের নেতাকর্মীর একাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটনের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ওই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীই নৌকার প্রার্থী মহিবকে হারাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

জানা যায়, মাহবুব তালুকদার ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। তবে ২০১৮ সালের মতো এবারও দলের মনোনয়ন পাননি। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। অন্যদিকে আবদুল্লাহ লিটন কখনও দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবারও মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীর অভিযোগ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব তালুকদার শক্তিশালী। তবে তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের একাধিক মামলায় আসামি হন, যা বর্তমানে বিচারাধীন। তা ছাড়া বর্তমান এমপি মুহিবকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় আছেন। উপজেলা সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কারের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রস্তাবও গেছে।

এসব ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করা মাহবুব তালুকদারের জন্য ঠিক হচ্ছে না। এতে দলের নেতাকর্মী বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

‘নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমরা তাঁর হয়েই কাজ করছি’ বলে জানালেন রাঙ্গাবালী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুন খান। তিনি বলেন, ‘আমরা দল করি এবং দলের আদর্শকে ভালোবাসি। তাই নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’

কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, বর্তমান এমপি মহিব ত্যাগী নেতাকর্মীকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন। কলাপাড়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার বলেন, নৌকার প্রার্থী মহিব কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন। দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই নেতাকর্মীকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব তালুকদারের দাবি, নেত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এ জন্য নির্বাচন জমে উঠেছে বলে তিনি মনে করেন। নৌকার প্রার্থী মহিব বলেন, ‘অনেকেই দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সবাই শপথ করেছিলাম– নেত্রী যার হাতে নৌকা দেবেন, তাঁর পক্ষে কাজ করব। কিন্তু শপথ ভঙ্গ করে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন কেউ কেউ। শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

আরও পড়ুন

×