ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

মাঠ ক্ষতবিক্ষত করে মেলার প্রস্তুতি

মাঠ ক্ষতবিক্ষত করে মেলার প্রস্তুতি

মাঠের ভেতরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। শিল্প ও বাণিজ্য মেলার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে শরীয়তপুর স্টেডিয়াম। নির্মাণসামগ্রী, স্টল আর ফটকে চেনার উপায় নেই স্টেডিয়ামের মাঠটি সমকাল

সোহাগ খান সুজন, শরীয়তপুর

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ | ২২:৪৫ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ | ১০:৪৯

শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গ্যালারি। খেলার জন্য রয়েছে সুন্দর মাঠ ও ক্রিকেট পিচ। সেই মাঠকে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে বিশাল কর্মজজ্ঞ। ইট, বালু, সিমেন্ট আর কাঠ-পেরেকের সাহায্যে স্টল নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকরা। কয়েক দিনের মধ্যেই এখানে শুরু হবে শরীয়তপুর শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। এর অনুমতি দিয়েছে খোদ জেলা প্রশাসন। ৩১ জানুয়ারি উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছে মেলা কমিটি।

এ কারণে মাঠটিতে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকবে  খেলাধুলা। নির্মাণসামগ্রীর দখলে থাকা মাঠে খুদে ক্রিকেটার ও ফুটবলাররা এখন যে যেখানে পারছে, সেরে নিচ্ছে প্র্যাকটিস। দীর্ঘমেয়াদি বিরতিতে মানসিক ও শারীরিকভাবে তারা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। অথচ আইনে খেলার মাঠে ভিন্ন কিছু করার নিয়ম নেই। বিকল্প জায়গা থাকলেও সেখানে মেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
মাঠটিতে নিয়মিত ফুটবল খেলে আল-আমিন বেপারি। তার ভাষ্য, শরীয়তপুরের একমাত্র খেলার মাঠ স্টেডিয়ামে। এখানে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করায় ফুটবলার ও ক্রিকেটারদের সবাইকে খেলা ও প্র্যাকটিস থেকে বিরত থাকতে হবে। মেলা শেষে মাঠের যে ক্ষতি হবে, তা সংস্কার হবে কিনা– তাও তারা জানে না। যে বড় বড় কাঠামো বা কর্মযজ্ঞ চলছে, তা সংস্কার সম্ভব হবে কিনা– তা নিয়েও সন্দিহান তারা। মাঠে চলমান ফুটবলের ‘আন্ডার ফিফটিন’ কোর্সও বন্ধ থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থাকে ম্যানেজ করে শরীয়তপুর স্টেডিয়ামের মাঠে এ আয়োজন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ উইবার্স প্রোডাক্টস ম্যানুফাকচার্স বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন এবং মনিপুরি তাঁত, জামদানি, বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন এ উদ্যেগ নিয়েছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে ক্রীড়াপ্রেমী ও খেলোয়াড়দের মধ্যে।

আইন অনুযায়ী, খেলার মাঠে খেলা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার বা ভাড়া দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করেই জেলা প্রশাসনের অনুমতিতে মাঠে আয়োজন হচ্ছে মাসব্যাপী মেলার। এতে পুরো অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০-এর ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ অন্য কোনোভাবে ব্যবহার বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। এ আইন লঙ্ঘনে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় সাজার বিধান আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, তিনি দীর্ঘদিন শিশুদের খেলার সঙ্গে জড়িত। তাঁর নিজেরও খুব কষ্ট লাগছে। এখানে ৭০ জন ছেলেমেযে় ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলার প্রশিক্ষণ নেয়। ২০ জন মেয়ে আছে। বাণিজ্য মেলা হলে পুরো মাঠ তছনছ হয়ে যাবে। চাইলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। মেলায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। এসব স্থাপনার পেরেক, কাঠ ও ইটের টুকরা এবং বালু মাঠে ছড়িয়ে থাকবে। এগুলো মেলার পর সংস্কার করতে হিমশিম খেতে হবে। দুই মাসের বেশি সময় লাগবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় পুরো মাঠে ইট বিছিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এর চারপাশে টিন দিয়ে ঘিরে ৫০টি স্টল বানানো হচ্ছে। মাঠের ভেতরেও রয়েছে অন্তত ২০টি স্টল। মেলা উপলক্ষে থ্রিডি শো থেকে শুরু করে চরকি, দোলনা, ট্রেন রাইডসহ নানা বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূল প্রবেশমুখের সামনে ইট দিয়ে প্রায় স্থায়ী অবকাঠামোর মতো স্থাপনা বানিয়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। মাঠের মাঝে রয়েছে বড় একটি টাওয়ার।

নামে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা হলেও থাকবে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জুতা থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার উপকরণ, কার্পেট, হাঁড়ি-পাতিল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কসমেটিকস, খাবার দোকানসহ নানা পণ্যের স্টল। সেখানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণার্থী সোহাগ বলছিল, সে নতুন এসেই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ২০ দিন হলো ক্রিকেটের প্র্যাকটিস করছে। আগে পুরো মাঠেই খেলতে পারত সে। এখন নেটের মধ্যে সীমিত জায়গায় ১৫ থেকে ২০ জন প্র্যাকটিস করে। আরও খেলোয়াড় জেলার বাইরে টুর্নামেন্টে আছে। তারা এলে প্র্যাকটিসের সুযোগ পাবে না সে।
জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শরীয়তপুর স্টেডিয়ামে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা হচ্ছে বলে দাবি মেলা পরিচালনা কমিটির পরিচালক ওসমান গনির। তিনি বলেন, মাঠের ক্রিকেট পিচের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য চারদিকে বাউন্ডারি করে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে, সে জন্য পিচ চট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। মাঠের যে ক্ষতি হবে, তা মেলা শেষে ঠিক করে দেবেন তারা। মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে খেলার উপযোগী করে দেবেন বলে দাবি তাঁর।
এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম মাতবর বলেন, তাদের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। যা আছে, খুবই সামান্য। মেলার আয়োজন হলে কিছু অর্থ ক্রীড়া সংস্থার ফান্ডে যাবে। এতে তারা উপকৃত হবেন। শরীয়তপুরের ক্রীড়াঙ্গন উপকৃত হবে। আর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদের ভাষ্য, সরকারি বিধি মেনে অনুমতি দেওয়া হয়েছে মেলার। মেলার ফলে যে ক্ষতি হবে, তা সংস্কার করে দেবে পরিচালনা কমিটি।

আরও পড়ুন

×