যমুনায় যুবলীগ নেতার বালু তোলা বন্ধে থানায় পাউবো

ধুনটের শহরাবাড়ি স্পারের কোলঘেঁষে বালু উত্তোলনের জন্য বসানো ড্রেজার ও বাল্কহেড। শনিবার তোলা ছবি সমকাল
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ | ২২:৪৪
বগুড়ার ধুনটের যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন যমুনা নদীর ছয়টি মৌজা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বালু তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে হুমকিতে রয়েছে শহরাবাড়ি স্পার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (রিভেটমেন্ট)। যুবলীগ নেতার এমন কর্মকাণ্ডে পাউবো কর্মকর্তারাও অসহায়। ফলে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন তারা।
পাউবোর বগুড়া জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী জানান, বেলাল হোসেন অবৈধভাবে ড্রেজার ও বাল্কহেড ব্যবহার করে যমুনা নদী থেকে বালু তুলে শহরাবাড়ি স্পারের ক্ষতি করছেন। তাঁকে মৌখিকভাবে নিষেধ করা হলেও তিনি এ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ধুনট থানা, ইউএনওসহ পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, ধুনটের ১০ হাজার একর ফসলি জমিসহ ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রাম, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা যমুনার ভাঙনের কবলে পড়েছিল। এ পরিস্থিতিতে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরাবাড়ি ও বানিয়াযান স্পার নির্মাণ করা হয়। এতে এলাকাটি ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা যুবলীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন যমুনা নদীর চৌবেড় মৌজা থেকে বালু তোলার ইজারা নিয়েছেন। তবে বৈশাখী, শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, বানিয়াযান, কৈয়াগাড়ি ও নিউ সারিয়াকান্দি মৌজা থেকেও দীর্ঘদিন অবৈধভাবে বালু তুলে আসছেন। ১০-১২টি ড্রেজার ও বাল্কহেড দিয়ে শহরাবাড়ি স্পারের কোলঘেঁষে ছয়-সাতটি পয়েন্টে রাতদিন বালু তোলা চলছে। এতে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, বাঁধ, স্পারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প হুমকিতে রয়েছে।
বানিয়াযান গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ইয়াকুব আলী, আমিনুল ইসলাম পলাশ, বাবলু মণ্ডল ও সবুজ মিয়ার ভাষ্য, বেলাল স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে তুলছেন। ভাঙন থেকে ভিটামাটি রক্ষায় এলাকাবাসী মানববন্ধন করেও প্রতিকার পাননি। ফরিদুল
ইসলাম ডলার নামে একজন জানান, বালু তোলার প্রতিবাদ করায় তাঁকেসহ তাঁর বৃদ্ধ বাবা, বোন ও ইয়াকুব আলীকে বেলালের বাহিনী প্রকাশ্যে পিটিয়েছিল। তিনি অবৈধ ব্যবসা পরিচালনায় বাহিনী গড়ে তুলেছেন।
যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইজারা নিয়ে স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করে যমুনা থেকে বালু তুলছেন। কে কী বলল, কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে ধুনট থানার ওসি সৈকত হোসেন বলেন, বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী লিটন আলীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তবে অভিযোগে তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর নেই। তাদের সঠিকভাবে অভিযোগ দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। সঠিকভাবে অভিযোগ দিলে মামলা রেকর্ড করা হবে। অন্যদিকে ইউএনও আশিক খান বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযোগ পাননি বলে জানান।