ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে শান্ত ঘুমধুমে ফিরছেন মানুষ

আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে শান্ত ঘুমধুমে ফিরছেন মানুষ

আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গ্রামে ফিরে ক্ষেতে কাজ করছেন গ্রামবাসীরা (ছবি-মাহবুব হোসেন নবীন)

সাহাদাত হোসেন পরশ, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৩:০৩ | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৩:৪৭

গত দুই দিন ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়নি। কিছুটা শান্ত পরিবেশের কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে ছেড়ে নিজ বাড়িতে ফিরছেন স্থানীয় মানুষ। 

গোলাগুলি ও মর্টার সেলের কারণে কয়েক দিন ধরে তাদের অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। কেউ কেউ ছিলেন দূরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। সেখান থেকে তারা ফিরছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্র এখন ফাঁকা। 

নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, এখানে গোলাগুলি কমে এসেছে। যারা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ছিল তারা ফিরে আসছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকেও ফিরছেন অনেকে। 

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর বাইশফাঁড়ি গ্রামে পরিবার নিয়ে প্রতিবন্ধী আবদুল মালেকের বাস। বাইশফাঁড়ি সেতুর অদূরে ৪-৫টি ছোট ছোট দোকানঘর। সেখানেই রাস্তার পাশে বেগুনি, পেঁয়াজু ও গুলগুলা বিক্রি করেন মালেক। তুমব্রুতে জন্মভিটে হওয়ায় সীমান্ত এলাকার অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি।নিজ দোকানে বসেই খুললেন গল্পের ঝাঁপি। বললেন, সীমান্তের লোক হওয়ায় ওপারের  গোলাগুলির মধ্যেই বাস করতে হয়। তবে এ দফায় যেভাবে ওপার থেকে গোলা এসে একের পর এক পড়তে শুরু করল, আমিও ভয় পেয়ে গেছি। চার দিন আগে স্ত্রী ও সন্তানদের পালংখালিতে আত্মীয়র বাসায় রেখে এসেছি। মঙ্গলবার রাত থেকে গুলির শব্দ কম হচ্ছে। তাই পালংখালি থেকে বাড়িতে ফেরত এসেছি। গোলাগুলি কমে যাওয়া এবং সীমানার ওপারে ক্যাম্পে যারা ঘোরাঘুরি করছে তা দেখে মনে হচ্ছে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পরাস্ত করে আরাকান আর্মি সীমান্তে তাদের ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে। 

কৃষক শামসুল আলম বলেন, নাসাকা বাহিনী আর আরাকান আর্মির পোশাক আলাদা। কয়েক দিন ধরে সীমান্তের ওপারে বিজিপি ক্যাম্পে আরাকান আর্মির পোশাকে অনেককে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। নাসাকার কারও দেখা নেই। 

কিশোর আরাফাত হোসেনের বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে। পেশায় অটোরিকশাচালক। সীমান্তের অনেক এলাকা থেকেই মিয়ানমারের বর্ডার আউটপোস্ট (বিওপি) স্পষ্ট দেখা যায়। তুমব্রু পার হতেই দেখা গেল, সীমান্তের কোলঘেঁষে একটি ফসলি মাঠে জনাবিশেক শ্রমিক কাজ করছেন। অদূরে কাঁটাতার, যা বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে বিভক্ত করেছে। সেখানেই মনজুর আলমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, কয়েকদিন গোলাগুলি থাকায় ভয়ে ক্ষেত-খামারে কেউ যায়নি। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ায় জমি থেকে সবাই মিলে বাদাম তুলছেন। আর কিছুদিন পার হলে সব বাদাম নষ্ট হয়ে যেত। সীমান্তে গোলাগুলির কারণে পরিবারের সবাই কুতুপালং চলে গেছে। তবে মনজুরের মা আমেনা খাতুন তাঁর ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও যাননি। তিনি বলেন, ‘মাকে কোথাও সরানো যায়নি। মরলে নিজের ঘরেই মরবে– এটা বলার পর মাকে অন্য কোথাও  নিতে পারিনি।’ 

পথ চলতে চলতে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে পাহাড়ের টিলায় টিলায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি বিওপি চোখে পড়ল। সেখানে ছিল অস্ত্রসহ অনেকের উপস্থিতি। সীমান্তের বাসিন্দারা যাদের বলছেন আরাকান আর্মির সদস্য। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সতর্ক পাহারা দেখা গেছে। তুমব্রুর একটি স্কুলেও বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন। তুমব্রুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার দিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে চার হাজারের মতো লোক। নারী-শিশুরা অন্যত্র চলে গেছে। গোলাগুলি বন্ধ হতে শুরু করলে কেউ কেউ ঘরে ফিরছেন। 
 

আরও পড়ুন

×