জুয়া খেলা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ৩৫, পিস্তলসহ গ্রেপ্তার ৮

দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় তুমুল সংঘর্ষ হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪ | ১৮:৫০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জুয়া খেলা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘বড়গোষ্ঠী’ ও ‘মহাজোট’ নামে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষে ৫ পুলিশসহ উভয়পক্ষের ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ‘বড়গোষ্ঠী’ ও ‘মহাজোট’ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৪০টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ৪/৫টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বিরাসার গ্রামে এই সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিপেটা, ৩ রাউন্ড কাঁদানো গ্যাস এবং ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে ৫ জন পুলিশসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ককটেল, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন এবং ৫ রাউন্ড গুলিসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অন্যতম অস্ত্রধারী মো. জসিম উদ্দিন, তিনি বিরাসার বড় গোষ্ঠীর মো. নূরুল ইসলামের ছেলে। সংঘর্ষ চলাকালে গুলি করার সময় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, গত রোববার রাতে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে বিরাসার গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বড়গোষ্ঠীর কাসেম মাস্টার ও চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক বাবুল মিয়ার গোষ্ঠীর আল-আমিনের সাথে একই এলাকার মহাজোট হিসেবে পরিচিত পৌরসভার প্যানেল মেয়র মিজান আনসারীর গোষ্ঠী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তাজ মোহাম্মদ ইয়াছিন ও সৈয়দ আলী মিয়ার গোষ্ঠীর নূরুল্লাহ ও সুজনের প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার জেরে সোমবার বিকেলে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও রিভলবার এবং ককটেল নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
মঙ্গলবার আড়াই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে ককটেলের বিস্ফোরণে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। নারী ও শিশুরা ভয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেনের নেতৃত্বে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ লাইন্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাপক লাঠিপেটা, ৩ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস এবং ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় পুলিশ গুলি করার সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন এবং ৫ রাউন্ড গুলিসহ বড়গোষ্ঠীর মো. জসিম উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে আরো ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংঘর্ষের সময় সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো. সোহেলসহ ৫ পুলিশ সদস্য এবং উভয়পক্ষের আরো ৩০ জন আহত হন। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে সময় টিভির ব্যুরোপ্রধান উজ্জ্বল চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহতরা জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেয়।
এদিকে সংঘর্ষের পর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু সাঈদ সাংবাদিকদের জানান, জুয়া খেলার ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে জেনেছি। সোমবার সংঘর্ষের বিষয়টি আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। তিনি বলেন, ‘বিরাসার গ্রামের কয়েকটি গোষ্ঠী এই সংঘর্ষে জড়িত হয়েছে।’ তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও আনসারী গোষ্ঠীর নেতা মো. মিজানুর রহমান আনসারী বলেন, মঙ্গলবার সকালে বড়গোষ্ঠীর আহত একজন মারা গেছেন- এমন গুজব তুলে বড়গোষ্ঠীর দাঙ্গাবাজরা মহাজোটের লোকদের বাড়িঘরে হামলা করলে সারা গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বড়গোষ্ঠীর নেতা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. বাবুল মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও বলা যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, সংঘর্ষ এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩ রাউন্ড কাঁদানো গ্যাস এবং ১৪ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয় এবং ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে গুলি করার সময় একটি বিদেশি পিস্তল এবং ৫ রাউন্ডগুলিসহ মো. জসিম উদ্দিন নামে এক অস্ত্রবাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
- বিষয় :
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া
- সংঘর্ষ
- আহত
- জুয়া খেলা