ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

কে নেবে তাদের দায়িত্ব

ফ্যাক্টরিতে আগুনে সালথার ২ শ্রমিকের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ২

কে নেবে তাদের দায়িত্ব

রিয়াজুল ফকির ও ইকবাল হোসেন

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১৫:২৬ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ | ১৬:১৭

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার চার যুবক মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুল এলাকার জে কে নামে প্লাস্টিক ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করছিলেন। ৭ মার্চ রাতে ওই ফ্যাক্টরিতে আগুনে তারা দগ্ধ হন। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দগ্ধরা হলেন, সালথার গট্টি ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া গ্রামে রিয়াজুল ফকির (৩৭), পাশের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন (৩৭), রাকিব হোসেন (২৫) ও মতিউর রহমান (৩৩)। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ মার্চ সন্ধ্যায় মারা যান রিয়াজুল। ৬ দিন পর মঙ্গলবার মারা যান ইকবাল। বাকি দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। কিন্তু এখন পর্যন্তু তাদের খোঁজখবর নেননি কোনো জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা। পরিবারের কাছে পৌঁছেনি সরকারি সহায়তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর তিনেক আগে অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে মারা যান ইকবাল হোসেনের বাবা। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে ইকবাল সংসারের হাল ধরতে ওই ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ নেন। সেখানে কাজ করে ভালোই চলছিল সংসার। দেড় বছর আগে বিয়েও করেন তিনি। পাঁচ মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছেন। ইকবাল সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে। 

ইকবালের মামা গোলাম হায়দার বলেন, আমার দুলাভাই অবৈধপথে বিদেশে গিয়ে মারা যান। তারপর আমার ভাগ্নে পরিবারের হাল ধরে। কিন্তু সেও লাশ হয়ে ফিরে এলো। বুধবার সকালে লাশ বাড়িতে আনা হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। তিনি বলেন, চিন্তা করছি ওদের সংসারটা কীভাবে চলবে। এখন কে নেবে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানের দায়িত্ব?

অন্যদিকে, ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার পরের দিন ৮ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটে মারা যান সালথার গট্টি ইউনিয়নের লক্ষণদিয়া গ্রামের রিয়াজুল ফকির। শনিবার সকালে তার লাশ বাড়িতে আনা হলে শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারে। রিয়াজুলের স্ত্রী ও দুটি মেয়ের আহাজারিতে বাড়ির পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। শনিবার বাদ জোহর লক্ষণদিয়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে রিয়াজুলকে দাফন করা হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন রিয়াজুল। তার এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না। এখন কি হবে রিয়াজুলের স্ত্রী ও মেয়ে দুটির। কে নেবে তাদের দায়িত্ব। এই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবারের মধ্যে।

লক্ষণদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও গট্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু বলেন, দগ্ধ চার যুবকই গরিব। ওদের দুজনের জীবন শেষ হয়ে গেছে। বাকি দুই জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। নিহত দুজনের পরিবার বেশি অসহায় ছিল। তাদের মৃত্যুতে স্ত্রী-সন্তানদের চরম বেকায়দায় পড়তে হবে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বালী বলেন, আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত দুজনের পরিবারের কাছে দ্রুত সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। আহত দুজনের চিকিৎসার ব্যপারেও আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।

সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, আমার ব্যক্তিগত ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তা নিয়ে তাদের বাড়িতে যাব। এছাড়া সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর মাধ্যমে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের স্থায়ী কিছু করার চেষ্টা করা হবে।

আরও পড়ুন

×