ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

মেয়েকে নিয়ে মায়ের আত্মহত্যা

রেললাইনের পাশে পড়ে ছিল জুতা-ব্যাগ ও মেয়ের প্রিয় কেক

রেললাইনের পাশে পড়ে ছিল জুতা-ব্যাগ ও মেয়ের প্রিয় কেক

রেললাইনের পাশে পড়ে রয়েছে জুতা-কেক। ছবি: সমকাল

যশোর অফিস

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪ | ১৯:৫৫ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ | ২২:৫৩

সোমবার দুপুর আড়াইটা। রেললাইনের পাশে বসে কেক খাচ্ছিলেন মা-মেয়ে। একটু কেক খেয়ে মেয়ের হাত ধরে রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করেন মা। এ সময় বিপরীত দিক থেকে একটি ট্রেন কাছে আসতেই ১২ বছরের মেয়েকে জোর করে টেনে নিয়ে রেললাইনে দাঁড়ান তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই মা-মেয়ের মৃত্যু হয়। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি পোলতাডাঙ্গা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন রেললাইনে আজ এ ঘটনা ঘটে। লাশের পাশ থেকে জন্মদিনের কেক, মোবাইল ফোন ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন– ঘটনাস্থলের পাশের বড় হৈবতপুর গ্রামের প্রয়াত মকছেদ আলীর মেয়ে লাকী বেগম (৩৫) ও তাঁর মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার মিম। তারা স্থানীয় সাতমাইল বাজারে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফাঁকা মাঠের মধ্যে রেললাইনের পাশে বসে মা-মেয়ে কেক খাচ্ছিলেন। এ সময় যশোর হয়ে ঢাকাগামী ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস আসছিল। বোরকা পরিহিত ওই নারী মেয়ের হাত ধরে রেললাইনের ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মেয়েটি বারবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল। এক পর্যায়ে জোর করে মেয়েটিকে নিয়ে ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে যান। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের ওপর মা-মেয়ের লাশ পড়ে আছে। ৫০ গজ দূরে লাইনের পাশে অর্ধেক খাওয়া একটি বড় কেক। এর পাশেই রয়েছে কেক মাখানো ছুরি। একটু দূরে পড়ে আছে দুই জোড়া জুতা ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ। 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন লাকী বেগমের ছোট বোন রোজিনা বেগম। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১২ বছর আগে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় আমার বোনের বিয়ে হয়। মিমের জন্মের চার বছর পর তাদের বিচ্ছেদ হয়। পরে বড় হৈবতপুর গ্রামের এজাজুলের সঙ্গে আপুর বিয়ে হয়। বছর দেড়েক পর তাদের বিচ্ছেদ হয়। এর পর মেয়েকে নিয়ে সাতমাইল বাজারে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করত আপু। মাস তিনেক আগে আবারও তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এজাজুল। কিন্তু তিন মাস চলে গেলেও বিয়ে না করে তিনি টালবাহানা করতে থাকেন। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে আমার বোন। সে বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার হুমকি দিত।’

রোজিনা জানান, কয়েক দিন আগে মিমের জন্মদিন ছিল। গতকাল সকালে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে মেয়েকে নিয়ে শহরে যান লাকী। এর পর মেয়েকে নিয়ে কেক কেটে একটু খাওয়ার পর ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা করেন। হতাশা থেকে মেয়েকে নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি রোজিনার।

জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কেউ একজন জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে দুর্ঘটনার খবর জানান। এর পর আমরা গিয়ে দেখি রেললাইনে দু’জনের লাশ পড়ে আছে। কাছে থাকা মোবাইল ফোন থেকে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, তা জানা যায়নি। 

যশোর রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনিতোষ বিশ্বাস জানান, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য যশোর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×