ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জামদানিপল্লি জমজমাট

৫০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

জামদানিপল্লি জমজমাট

রূপগঞ্জের নোয়াপাড়ায় জামদানিপল্লিতে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত তাঁতিরা সমকাল

জিয়াউর রাশেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:২০

আসন্ন ঈদ সামনে রেখে রূপগঞ্জের বিসিকসহ বিভিন্ন জামদানিপল্লিতে চলছে শাড়ি তৈরির মহোৎসব। সেই সঙ্গে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। জামদানি শাড়ির কদর ও দাম দুই-ই এবার ভালো। তাই ক্রেতা, বিক্রেতা ও তাঁতি সবার মুখেই ফুটে উঠেছে হাসি।
জেলা জামদানি তাঁতশিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, এ এলাকায় জামদানি শাড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৬০ হাজার তাঁতি। তবে জামদানি শিল্পীদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে এখানে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার জামদানি তাঁতি ছিল। গত কয়েক বছরে করোনাসহ বিভিন্ন কারণে জামদানি শিল্প কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবারের ঈদ সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জামদানি শিল্প। তবে এবার জামদানিপল্লিতে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রির চেয়ে অনলাইনে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা। ই-কমার্স ও সরাসরি শাড়ি কিনতে আসা ক্রেতাদের কাছে এই ঈদে প্রায় ৫০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির টার্গেট রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া প্রায় ১০ কোটি টাকার শাড়ি মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ  বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। জামদানি শাড়ির বিভিন্ন নকশার মধ্যে পান্না হাজার, তেরছা, পানসি, ময়ূরপঙ্খি, বটপাতা, করলা, জাল, বুটিদার, জলপাড়, দুবলী, ডুরিয়া, বলিহার, কটিহার, কলকাপাড় বেশ জনপ্রিয়। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

উপজেলার নোয়াপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে খটাখট শব্দে মুখর জামদানিপল্লি। তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা নকশায় তৈরি করছেন শাড়ি। দোকানগুলোতে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতার ভিড় লক্ষণীয়। আগে তাঁতিরা শুধু শাড়ি তৈরি করলেও এখন পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, টুপিস ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করেন।

তাঁতিরা জানান, করোনার পর গত দু-তিন বছর বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হলেও এ বছর তাদের জামদানি বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। সরাসরি পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। এতে তারা দামও ভালো পাচ্ছেন। এ ছাড়া সরাসরি ক্রেতার পাশাপাশি তারা ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে শাড়ি বিক্রির নতুন বাজার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এই দুই মাধ্যম মিলিয়ে তাদের এবারের ঈদে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পল্লির তাঁতি ও দোকান মালিকদের সবারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। ঈদ সামনে রেখে সেই পেজের মাধ্যমেই তারা শাড়ি বিক্রি করছেন।

জামদানিপল্লির নোয়াপাড়া জামদানি মালিক কবির হোসেন জানান, গত কয়েক বছর জামদানির বাজার খারাপ গেলেও এ বছর থেকে জামদানির বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বিগত দিনগুলোতে তাঁকে শাড়ি বিক্রি করে তাঁতিদের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হলেও এবার তিনি বেশ ভালোভাবেই তা পারছেন।  

রূপসী জামদানির মালিক রমজান আলী জানান, তাঁর বাবা হোসেন ভূঁইয়া ২০ বছর ধরে জামদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঈদ সামনে রেখে অনলাইন পেজে তাদের শাড়ি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।

জামদানির কারিগরদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর জামদানির বাজার মন্দার অজুহাতে তাঁতকল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়াননি। কিন্তু এ বছর জামদানির বাজার অনেকটাই ভালো। কিন্তু এর পরও কারিগরদের মজুরি তেমন বাড়ানো হয়নি।
এ ব্যাপারে তাঁতকল মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, জামদানি শাড়ি বিক্রি বাড়লেও খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যেমন সুতার দাম, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন খরচ বাড়ার কারণে শাড়ি বিক্রি বেশি হলেও তেমন একটা লাভ হচ্ছে না। তাই কারিগরদের মজুরিও তেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

 

আরও পড়ুন

×