একজনের কার্ড দিয়ে চাল তুলে খেয়েছেন অন্যজন

কার্ডের প্রকৃত মালিক রোজিনা আক্তার
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:৪৫ | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:৪০
সরকারি সহায়তার একটি কার্ড করে দেবেন বলে জন্মসনদের ফটোকপি ও ছবি নেন যুবলীগ নেতা শাহজাহান মিয়া। এরপর কার্ড হয়েছে কিনা জানতে পারেননি সহায়তাপ্রত্যাশী রোজিনা আক্তার। কিন্তু তাঁর সহায়তার কার্ড দিয়ে চাল তুলে নিয়েছেন অন্য একজন। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে যান রোজিনা। একই দিনই কার্ড ও চাল তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে রাজি হচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। রোজিনা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দত্তপুর গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী।
মঙ্গলবার দুপুরে মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দত্তপুর গ্রামে গেলে মানিক মিয়া জানান, তাঁর স্ত্রী রোজিনা চাল আনতে পরিষদে গেছেন। বছর দেড়েক আগে সরকারি চালের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে জন্মসনদের ফটোকপি ও ছবি নেন যুবলীগ নেতা শাহজাহান। কিন্তু এর পর কার্ডের আর কোনো খোঁজ পাননি তারা। তবে রোজিনার কার্ড দিয়ে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৪ মাসের চাল তুলে নিয়েছেন কুলসুম নামে এক নারী।
মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই চাল নিয়ে বাড়িতে ফেরেন রোজিনা আক্তার (২৭)। সাংবাদিকদের তিনি জানান, কিছু দিন আগে তাঁকে পরিষদে যেতে বলেন ইউপি চেয়ারম্যান তাছলিমা আক্তার। মঙ্গলবার সকালে পরিষদের গেলে তাঁকে ৩০ কেজি চালসহ কার্ডটি ফেরত দেন তিনি। তবে চৌদ্দ মাস কে চাল তুলেছেন, সে বিষয়ে জানতে চাইলে কিছু বলতে রাজি হননি রোজিনা। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শাহজাহানের ভাতিজা আল আমিনসহ দুই যুবক। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ভয়েই কিছু বলতে সাহস পাননি রোজিনা। তবে রোজিনার শ্বশুর আবুল কালাম বলেন, ‘বাবা, আমরা সহজ-সরল মানুষ। আমার ছেড়াডা আরও বোকা। কার নাম কইয়া কোন বিপদে গিয়া পড়ি, চাউল পাইছি হেইডাই বড়।’
যুবলীগ নেতা শাহজাহানের ভাষ্য, তিনি কার্ড করে দিয়েছেন সত্য। তবে এত দিন রোজিনার কার্ডের চাল কে উত্তোলন করেছে, তা বলতে পারবেন না তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তুলে নিয়েছি, কেউ যদি সেটা বলে, তা হলে বুঝবেন তারা আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।’
ইউপি সদস্য মিলন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান, রোজিনার কার্ডটি দিয়ে এত দিন কুলসুম নামে কোনো এক নারী চাল উত্তোলন করেছেন বলে শুনেছেন তিনি। চাল বিতরণের সময় কার্ডে থাকা ছবি শনাক্তের ঘরে একজনকে স্বাক্ষর করতে হয়, সেটা কে করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব করে থাকেন। এ বিষয়ে কিছু জানতে হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় মোয়াজ্জেমপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাছলিমা আক্তারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, রোজিনা এত দিন চাল তুলে তাঁরই প্রতিবেশী কাকে যেন দিয়েছেন। এখন তাদের মধ্যে ঝগড়া হওয়াতে মঙ্গলবার ঝগড়া মিটিয়ে রোজিনাকে কার্ড ও চাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তিনিই চাল নেবেন।
চাল বিতরণে তদারকি কর্মকর্তা নান্দাইল উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাশিদা রহমান জানান, বিষয়টি কেউ তাঁকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবেন।
- বিষয় :
- সরকারি অনুদান
- নান্দাইল