বেতন বকেয়া ২১ মাস, ঈদের আগে করা হলো চাকরিচ্যুত
বগুড়ার আউটসোর্সিংয়ের ৩২ কর্মচারী

ছবি: সমকাল
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ | ২০:৪৪ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ | ২০:৫২
বগুড়ার আট উপজেলায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৩২ কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দাপ্তরিক জটিলতার অজুহাতে গত ২১ মাস ধরে তাঁদের বেতন বকেয়া রাখা হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও এর কোনো সুরাহা করতে পারেননি তাঁরা। এর মধ্যে গত সোমবার তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
ঈদের মাত্র ১০ দিন আগে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ওই কর্মচারীরা। সেখানে তারা বকেয়া পরিশোধ এবং চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের ৫৩টি উপজেলায় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে টিকেট ক্লার্ক, বাবুর্চি ও নৈশপ্রহরীর মতো পদে নিয়োগ পান ৪৫৯ জন। তাঁদের মধ্যে নওগাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সারমী ট্রেডার্সের মাধ্যমে বগুড়ায় ৩২ জনের নিয়োগ হয়। দুই বছরের ওই প্রকল্পের মেয়াদ পরে আরও দুই বছর বাড়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। উপজেলা পর্যায়ের এসব কর্মচারীদের মাসে ১৬ হাজার ১৩০ টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা ছিল। তবে প্রথম দফায় ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত বেতন পেলেও পরে আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে গত সোমবার বগুড়ার সিভিল সার্জন শফিউল আজমের সই করা নোটিশে তাদের চাকরিচ্যুতি করা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আউটসোর্সিংয়ে এই চাকরি পেতেও তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এমনকি প্রতি মাসের বেতন থেকেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিতে হতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকিট ক্লার্ক মরিয়ম খাতুন বলেন, গত ২১ মাস ধরে এই মাস না পরের মাসে বেতন দেবে বলে আমাদের কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোনো সুরহা না হতে এখন চাকরিচ্যুতও করা হলো। ঠিকাদারকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায় না। মাঝে-মধ্যে ফোন খোলা থাকলেও নানা অজুহাত দেখান। সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ধরণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন, চাকরি পেতে ঠিকাদারকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলাম। প্রতিমাসে যা বেতন পেতাম সেখান থেকেও তিনি ২ হাজার টাকা করে নিতেন। এখন ঈদের বোনাস হিসেবে চাকরি হারিয়েছি।
গাবতলী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকিট ক্লার্ক আজিজুল হক বলেন, স্ত্রী ও সন্তানরদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ঠিকাদার মাসের পর মাস প্রতারণা করে গেছেন, কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। এখন চাকরিও নেই। ২১ মাসের বেতনের টাকা আমাদের কে দেবে?
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সারমী ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী ও ঠিকাদার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়া কর্মচারীদের অব্যাহতি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে বকেয়া বেতনের ঘটনা সত্য। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসহযোগিতা করেন। আমি ঢাকায় কথা বলেছি। আশা করি ঈদের পর ওই কর্মচারীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অসহযোগিতা করলে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।
- বিষয় :
- বগুড়া
- চাকরি
- আউটসোর্সিং