ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ঈদ আসেনি তিন সন্তান নিয়ে দিশেহারা পপির ঘরে

দাউদকান্দিতে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা

ঈদ আসেনি তিন সন্তান নিয়ে দিশেহারা পপির ঘরে

স্বামী জামাল হোসেনের সঙ্গে পপি আক্তার। ফাইল ছবি

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ২০:৩৭ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৫৩

জামাল হোসেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি করতেন। ছিলেন যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন এই ব্যবসায়ী। সেই থেকে এক বছর হতে চলল। মেলেনি চার্জশিট। তাঁর স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান পায়নি কোনো ক্ষতিপূরণ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অথৈ সাগরে ডুবে যান ওই নেতার সহধর্মিনী পপি আক্তার। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন সমকালের এই প্রতিবেদক।

পপি আক্তার বলেন, 'বছরের দুই ঈদসহ যেকোনো প্রয়োজনে সাধ্যমতো সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতেন জামাল। কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুরে আমাদের বাসায় ছুটে আসতেন অনেক নেতাকর্মী ও অনুসারী। তাদের জন্য প্রায় সপ্তাহ ধরে আমাদের কেনাকাটা করতে হত। এরপর নিজেদের ও আত্মীয়স্বজনের জন্য কেনাকাটা করতাম। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর এই বাড়ির পথ যেন সবাই ভুলে গেছে। কেমন আছি কেউ একবার দেখতেও আসে না।'

তিনি বলেন, জামাল হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকরা গ্রেপ্তার হয়। বের হয় নেপথ্যের কারণ। ধরা পড়েছিল হোতারাও। এতে অনেকটা আশাবাদী হলেও একে একে জেল থেকে জামিনে বের হয়ে যায় সব আসামি। একমাত্র শুটার দেলোয়ার হোসেন দেলুই কারাগারে আছে। এতে বেড়েছে ভয় ও আতঙ্ক। তারা প্রতি কদম অনুসরণ করে। মামলা উঠিয়ে নিতে দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি। 

পপি বলেন, 'স্বামী হারিয়ে আমাকে ত্রিমুখী লড়াই করতে হচ্ছে। যেখানে আগে কখনো ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হত না। সেখানে এখন আমাকেই সব করতে হচ্ছে। তিন সন্তানকে স্কুলে আনা-নেওয়া করা, বাজারঘাট করা, সংসার চালানো- সব মিলিয়ে এক মুহূর্ত নিস্তার নেই। একই সঙ্গে আমাকে ছেলেমেয়েদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, মামলা চালাতে হচ্ছে, কোর্টকাচারি দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। সঞ্চয় বলতে যা ছিল সব শেষ হয়েছে বেশ আগেই। ধারদেনা করে কিছুদিন ধরে চলছি। তাই এবারের ঈদের আনন্দ আমাদের বাড়ি পর্যন্ত আসতে পারেনি। অর্থাভাবে যেখানে দুমুঠো আহার যোগানো দায়, সেখানে ঈদের কেনাকাটা করব কীভাবে?'

এই গৃহবধূ জানান, জামালের বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণি, মেঝো ছেলে পঞ্চম ও মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল ওই যুবলীগ নেতার। কিন্তু এর কিছুই তিনি ছুঁইতে পারেননি। তার আগেই তাঁকে পরপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর সন্তানদের ন্যূনতম শিক্ষার অধিকারটুকুই নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

গত বছরের ৩০ এপ্রিল কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুর পশ্চিমবাজারে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে হত্যা করে। তিনি তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ঘটনার দু'দিন পর তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদারসহ ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের নামে দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলা করেন তাঁর স্ত্রী পপি আক্তার। এ মামলায় সোহেলসহ বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

×