ঈদে মন পড়ে ছিল সন্তানের কাছে

ঈদের দিন গোবিন্দগঞ্জ ছোট সোহাগী গ্রামে মেহেরুননেছা বৃদ্ধাশ্রমে বাসিন্দারা সমকাল
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:১৮
ঈদ উপলক্ষে কেনা হয়েছে নতুন লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, শাড়ি-কাপড়। রান্না হয়েছে সেমাই-পেলাও-মাংসসহ নানা খাবার। এর পরও দুঃখ ঘোচে না। ঈদ এলেই যেন নেমে আসে বিষাদের ছায়া। অশ্রুতে ভরে ওঠে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মেহেরুননেছা বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের দুই চোখ।
গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের কালিডোবা গ্রামের বাসিন্দা শত বছর ছুঁই ছুঁই জবেদ আলী বৃদ্ধাশ্রমে এসেছেন সাত বছর আগে। তিনি বলেন, ‘বয়স হয়েছে। কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। ছেলে ও ছেলের বউরা কটু কথা বলত। পরে বাড়ি থেকে বের করে দিল। অপরিচিত এক লোক তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছেন। ছেলেমেয়েরা খোঁজ নেয় না। এখানে ভালো আছি। তবে ঈদ এলে সন্তানের কথা মনে পড়ে। তাদের দেখতে মন চায়।’
ফাহিমা বেওয়ার (৬৫) ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ছেলে তাঁর খোঁজ রাখে না। মজিরন বেওয়ার (৮৫) স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। তিন বছর হলো এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। তার স্বজনও খোঁজ রাখে না।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ছোট সোহাগী গ্রামে ২০১৭ সালে স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে উঠেছে মেহেরুননেছা বৃদ্ধাশ্রম। শুরু থেকেই মানুষের অনুদানে চলছে বৃদ্ধাশ্রমটি। বর্তমানে ২৬ জন নারী ও ১৯ জন পুরুষ রয়েছেন এখানে। তাদের অনেককেই রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। ধনী-গরিব সবাই যখন ঈদ আনন্দে মশগুল, সে সময়ও প্রিয়জন ছাড়া নিভৃতে বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জল ফেলছেন তারা। অনেকেই আশায় ছিলেন ঈদে ছেলেমেয়েদের কেউ না কেউ আসবে একটু খোঁজ নিতে। কিন্তু সকাল পেরিয়ে দুপুর, সন্ধ্যা রাত গড়ালেও কেউ আসেনি খোঁজ নিতে। বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের মাঝে প্রিয় সন্তানের জন্য মুখ লুকিয়ে নীরবে কাঁদছেন বাবা-মা।
কথা হয় বৃদ্ধ হামিদ মাস্টারের সঙ্গে। তিনি স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে অবসরকালীন পাওয়া ভাতা দিয়ে চিকিৎসা করান। পরে ছেলেকে বিয়ে করান। বয়সের ভারে যখন হামিদ মাস্টার কাজ করতে অক্ষম, তখন সংসারে সৃষ্টি হয় কলহ। অনাদরে-অবহেলায় নিজেই এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেন।
হামিদ মাস্টার বলেন, সন্তান থাকার পরও শেষ বয়সে ঠাঁই হলো বৃদ্ধাশ্রমে। কোনো বাবা-মায়ের যেন শেষ বয়সে এমন পরিণতি না হয়।
বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আপেল মাহমুদ জানান, প্রতিষ্ঠানের সদস্য ও বিভিন্ন মানুষের অনুদানে চলে বৃদ্ধাশ্রমটি। এখানে যারা আশ্রয় পেয়েছেন তারা সবাই বয়োজ্যেষ্ঠ। আমরা তাদের মা-বাবা, দাদা-দাদির মতো দেখে থাকি। তাদের সময় মতো গোসল করাই। অসুস্থ হলে খাইয়ে দিই।
- বিষয় :
- বৃদ্ধাশ্রম