ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লাঙ্গলবন্দ স্নানে নেই কয়েকশ বছরের মেলা

লাঙ্গলবন্দ স্নানে নেই কয়েকশ বছরের মেলা

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে আদি ব্রাহ্মপুত্র নদের তীরে সোমবার স্নান উৎসবে অংশ নেন পুণ্যার্থীরা সমকাল

 নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:১১

‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, আমার পাপ হরণ করো’– এই পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অষ্টমী স্নানে অংশ নিচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ স্নান উৎসব শেষ হবে। তবে শত শত বছর ধরে স্নান উপলক্ষে বসা অষ্টমী মেলা এবার হয়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশে এ মেলা বসেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গতকাল সোমবার বিকেল ৪টা ২১ মিনিটে শুরু হয় স্নানের লগ্ন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত লগ্ন থাকবে। এবার প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা দীর্ঘ লগ্ন হওয়ায় মানুষের ভিড় ছড়িয়ে গেছে। ফলে সোমবার বিকেলে লাঙ্গলবন্দের ঋষিপাড়া থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত রাস্তায় মানুষের চাপ কম ছিল। 

তবে লাঙ্গলবন্দের ঐতিহ্যবাহী মেলা এবার হচ্ছে না। লাঙ্গলবন্দের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা সজল চন্দ্র দাস জানান, অন্যবার সাতদিন মেলা হয়। মেলায় খাট-পালঙ্ক, আসবাবপত্র, দা, বটি থেকে শুরু করে বহু ধরনের দোকান বসত। এবার রাস্তার দু’পাড়ে ঢোল, খেলনা ও পিটি-নিমকি নিয়ে কিছু দোকান বসলেও বড় মেলাটি নেই। 
লাঙ্গলবন্দের প্রেমতলা মন্দিরের সমন্বয়ক ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, শত শত বছর ধরে লাঙ্গলবন্দ স্নান ও মেলা হচ্ছে। স্নান হিন্দুদের কিন্তু মেলায় হিন্দু মুসলিম সবাই আসে। এ বছর প্রশাসনের নির্দেশে মেলা বসেনি বলে জানতে পেরেছেন। সংসদ সদস্যের অনুরোধে প্রশাসন এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শুনেছেন। রাস্তায় মানুষ চলাচলের সুবিধার্থে নাকি এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা এ রকম অজুহাতে বন্ধ করা ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

লেখক, কলামিস্ট তারাপদ আচার্য বলেন, মেলা লাঙ্গলবন্দের প্রাণ। মেলা বন্ধ করা ঠিক হয়নি। স্নানোৎসব আয়োজক নেতৃবৃন্দের বিষয়টি সংসদ সদস্যকে বুঝিয়ে বলা উচিত ছিল। 
তবে লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী স্নান উদযাপন কমিটির সভাপতি স্বরজ কুমার সাহার ভাষ্য–  স্নানোৎসব উপলক্ষে লোকজ মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও রাস্তার দু’পাশেই বসেছে লোকজ মেলা।

এ ব্যাপারে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু বলেন, সংসদ সদস্য মেলা বন্ধ করতে বলেননি। তিনি বলেছেন রাস্তা থেকে দূরে কোনো মাঠ থাকলে সেখানে মেলা বসাতে। আর রাস্তার দু’পাড়ে যাতে দোকান না বসে। যাতে চলাচল নির্বিঘ্ন হয়। কয়েক বছর আগে ভিড়ের চাপে ১০ জন নিহত হওয়ার মতো ঘটনা যাতে না ঘটে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। খালি জায়গায় মেলা বা কোনো দোকান নেই। রাস্তার পাশে ঠিকই দোকান বসেছে। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আরও তৎপর হতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, উৎসবের প্রস্তুতি কমিটির সভায় মেলা না করার ব্যাপারে সবাই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা শুধু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন

×