পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন ইউএনও
টিকিট না কেটে শিশুপার্কে

ফাইল ছবি
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:২৭
শরীয়তপুরে ঈদকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি শিশুপার্ক চালু করেছে। শরীয়তপুর পার্ক নামে এই পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। গত সোমবার টিকিট ছাড়া দেয়াল টপকে পার্কে ঢোকায় পাঁচ শিশুকে ইউএনও মো. মাইনউদ্দিনের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে দীর্ঘ সময় জনসমক্ষে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে এই কাণ্ড করেন ইউএনও। রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে তিন শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্য দু’জনকে আরও প্রায় দেড় ঘণ্টা গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের প্রহরায় আটকে রাখা হয়। এই শিশুদের বয়স ১০ থেকে ১৩ বছর।
শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে শাস্তি ও আটক রাখার একটি ভিডিও সমকালের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পাঁচ শিশুকে আটক করেন গ্রাম পুলিশ এবং ইউএনওর ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা। তারা শিশুদের পার্কে অবস্থানরত ইউএনওর কাছে নিয়ে আসেন। পরে পার্কের পূর্ব পাশে একটি কড়ই গাছের সামনে পাঁচ শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ সময় ইউএনওকে ওই শিশুদের উদ্দেশে আঙুল উঁচিয়ে রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলতে দেখা যায়। একসময় গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উদ্দেশ করে ইউএনওকে বলতে দেখা যায়, ‘বাবা-মা না আসা পর্যন্ত তাদেরকে তোমরা ছাড়বে না।’ ঘটনার সময় পার্কে উপস্থিত অনেক দর্শনার্থী মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে শিশুদের ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, দীর্ঘ সময় কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার পর কালো টি-শার্ট পরা একটি শিশু কেঁদে কেঁদে ইউএনওকে বলছে, ‘স্যার, আমাকে ছেড়ে দেন, আমি আর কখনও এইখানে ঢুকব না।’ পরে ইউএনও শিশুটিকে ডেকে তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেয়াল টপকে প্রবেশ করা অপরাধ। এটা চুরির সমান অপরাধ, তোমরা জানো কিনা? এই কাজ যেন আর কখনও করতে না দেখি।’ পরে সেই শিশুসহ তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে শিশুদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, টিকিটের টাকা দেওয়ার পর তাদের ছাড়া হয়েছে।
তবে বাকি দুই শিশুকে তখনও আটকে রাখা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ইউএনও গ্রাম পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলছেন, ‘পার্ক বন্ধ হওয়ার এক ঘণ্টা পর তাদেরকে ছাড়বে। এর আগে তাদেরকে ছাড়বে না।’ এরপর ইউএনও পার্ক থেকে চলে যান। রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়লে তিন শিশু সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এক শিশুর বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে বাসায় এসে কান্নাকাটি করছিল।
পরে ঘটনা খুলে বলে, তাকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার বন্ধুরা হাসাহাসি করেছে। এখন সে বলছে আর স্কুলে যাবে না। আমার ছেলে যদি অপরাধ করে থাকে, ইউএনও আমাকে ফোন করতে পারত। না হয় আমি আমার ছেলেকে শাসন করতাম। আমি গরিব বলে হয়তো আমার ছেলেকে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখল। অন্য শিশুদের ঠিকই ছেড়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে ইউএনও মো. মাইনউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। কয়েকজন শিশু দেয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। তারপর নিরাপত্তা রক্ষী যারা ছিল, তারা তাদের ধরে এনেছে। ওরা ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে। আমি তাদের বুঝিয়ে বলেছি দেয়াল টপকে প্রবেশ করা অপরাধ। এ ছাড়া দুই শিশুকে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনাটিও আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি এ বিষয়ে গ্রাম পুলিশ সদস্যদের কোনো অবহেলা রয়েছে কিনা।’
- বিষয় :
- শিশু পার্ক