ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘রোড টু বালুরঘাটে’ শরণার্থী-জীবন

‘রোড টু বালুরঘাটে’ শরণার্থী-জীবন

হেঁটে যাচ্ছেন শরণার্থীবেশী হাজারো মানুষ। শনিবার সকালে নওগাঁ শহরে আয়োজিত ‘রোড টু বালুরঘাট’ পদযাত্রায় সমকাল

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ২২:৪৩

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এক কোটির বেশি মানুষ শরণার্থী হয়েছিল প্রতিবেশী ভারতে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংস অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে তাদের এই যাত্রাপথ ছিল দুর্ভোগের। ওই দেশে গিয়েও দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়েছিল। সেই স্মৃতি সামনে রেখে নওগাঁয় গতকাল শনিবার আয়োজন করা হয় ‘রোড টু বালুরঘাট’ নামে এক প্রতীকী শোভাযাত্রা।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ, নওগাঁর আয়োজনে সকাল ১০টায় শহরের তাজের মোড় থেকে শুরু হয় পদযাত্রাটি। এতে শরণার্থীর বেশে শহরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। পদযাত্রাটি শহরের ব্রিজের মোড়, বইপট্টি হয়ে পুরাতন কালেক্টরেট চত্বর মাঠে গিয়ে শেষ হয়।

আয়োজক সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁর অধিকাংশ মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরে আশ্রয় নেয়। তাদের দুর্ভোগ-দুদর্শার চিত্র তুলে ধরতে ‘রোড টু বালুরঘাট’ নামে এই আয়োজন। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ওই সময়ের জনসাধারণের ত্যাগের বিষয়টি জানতে পারবে বলে আশা করছেন তারা। 
শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী নাইস পারভিন বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস যে বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়, তা থেকে বাঁচতে নওগাঁ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। তাদের এই কষ্ট এবং বাস্তব জীবন এই প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের জন্য এ প্রতীকী শোভাযাত্রা। একুশে পরিষদ শুরু থেকেই মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণহত্যা ও ভাষাসংগ্রামীদের নিয়ে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, শরণার্থীরা দুর্ভোগের যে জীবন কাটিয়েছেন, নতুন প্রজন্মকে তা জানাতে। তাদের দুঃখকষ্ট, স্বজন হারানোর বেদনা, স্বদেশ ছেড়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়ার যন্ত্রণা তুলে ধরতেই এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা এদেশে কীভাবে হত্যাযজ্ঞ, লুটতরাজ, নারী নির্যাতন চালিয়েছে, সেটাও উপস্থাপন করেছেন তারা।

তিনি বলেন, দুই ধরনের মানুষ শরণার্থী হয়েছিলেন। একটা অংশ দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। দেশের ভেতরেও শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল অন্য অংশ। এই দুই রকম শরণার্থী জীবন যে কতটা কষ্টের, কতটা যন্ত্রণার, তা নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপনের জন্যই প্রতীকী পদযাত্রাটি করা হয়েছে।

একুশের পরিষদ, নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি. এম আব্দুল বারী এ বিষয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বর্বরোচিত অত্যাচার, নিপীড়ন, গণহত্যা চালায়। এ থেকে রক্ষা পেতে যুদ্ধের শুরু থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম ভাগে নওগাঁর সড়ক ধরে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে যায়। তারা শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেয়। চলার পথে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা স্মরণ করতে এমন আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষের ত্যাগ জানতে পারবে বলে আশা করছেন ডি. এম আব্দুল বারী। 

পদযাত্রায় নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সুবল চন্দ্র মণ্ডল, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, খন্দকার আব্দুল্লাহ পাভেলসহ অন্যরা অংশ নেন।

আরও পড়ুন

×