তাপপ্রবাহে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

টমেটোসহ অন্য সবজি ক্ষেত
এম সেকান্দর হোসাইন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৫১
সীতাকুণ্ড উপজেলায় চলতি মৌসুমে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে টমেটো। এতে নামমাত্র মূল্যে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। প্রক্রিয়াজাতকরণ বা হিমাগারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় চলতি বছর ৫৯০ একর জমিতে টমেটো আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছেন ১৫ হাজার টন। তবে উৎপাদন ভালো হলেও প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হয়েছেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে দ্রুত নষ্ট হওয়ায় বর্তমানে টমেটো বিক্রি করে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাচ্ছেন না চাষি।
উপজেলার বারৈয়ারঢালা, সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, টমেটোর ভারে ক্ষেতে নুয়ে পড়েছে গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে পাকা টমেটো। কিন্তু টমেটো তুলে বিক্রি করতে আগ্রহ নেই কৃষকের। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টমেটো।
চাষিরা জানান, এক মণ টমেটো বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাতকরণে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
সৈয়দপুর ইউনিয়নের কৃষক নুরুল আবছার বলেন, তিনি দেড়শ শতক জমিতে টমেটো আবাদ করেছেন। ধারদেনা করে টমেটো চাষে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু টমেটো বিক্রি করে যে অর্থ পাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে বাজারজাতকরণে।
টিটু চৌধুরী নামে আরেক কৃষক বলেন, মৌসুমের প্রথম দিকে কিছুটা দাম পেলেও মাঝখানে এসে টমেটোর দাম পড়ে গেছে। বর্তমানে ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে যে টাকা খরচ হয়, টমেটো
বিক্রি করতে হচ্ছে তার অর্ধেক দামে। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো।
টমেটো আবাদ নিয়ে হতাশা ঝরে শহিদুল ইসলাম নামের অপর এক কৃষকের কণ্ঠে। তিনি একশ শতকের মতো জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। তাতে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ
টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু টমেটো বিক্রি করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষকদের ক্ষতি এড়াতে উপজেলায় একটি হিমাগার নির্মাণের
দাবি জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিব উল্লাহ বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেই সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক টমেটোসহ অন্য সবজি চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে টমেটো দ্রুত পেকে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে যদি টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার থাকত, তাহলে এসব টমেটো নষ্ট হতো না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ফসল চাষে আরও আগ্রহী হতেন চাষিরা। টমেটোর পাশাপাশি অন্যান্য সবজির কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশায় আছেন।
- বিষয় :
- টমেটো