বনে পাকা স্থাপনার ‘অনুমতি’ মেলে ৫০ হাজার টাকায়

কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার পাহাড়ে নির্মাণাধীন অবৈধ পাকা স্থাপনা সমকাল
বেলাল উদ্দিন বিল্লাল, পেকুয়া (কক্সবাজার)
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ২৩:৫৩
কক্সবাজারের পেকুয়ার বারবাকিয়া, টইটং ও শিলখালীর পাহাড়ি অঞ্চলে বন বিভাগের জমিতে গত দুই বছরে গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক পাকা স্থাপনা। নির্মাণ চলছে আরও। তবে সংরক্ষিত এসব বনাঞ্চলে পাকা স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। অথচ বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হককে মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিলেই সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণের অলিখিত অনুমতি মেলে বলে অভিযোগ।
স্থানীয়রা জানান, সংরক্ষিত বনে প্রতিটি স্থাপনা গড়ে তুলতে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন হাবিবুল হক। এভাবে তিনি কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নিয়েছেন।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে হাবিবুল হক দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০২১ সালের শুরুতে। অভিযোগ, কিছুদিন পরই তিনি শুরু করেন এ বাণিজ্য। গত দুই বছরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন পেকুয়ার তিন পাহাড়ি অঞ্চলে এভাবে ১০০ হেক্টর জায়গা ‘বিক্রি’ করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বারবাকিয়া ও শিলখালীর পাহাড়ি জমিতে পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তার পক্ষে আর্থিক লেনদেন করেন পাহাড়িয়াখালী এলাকার জালাল আহমদ। তিনি বন বিভাগের হেডম্যান পরিচয় দিয়ে বনে অপরাধমূলক কাজও করেন। এলাকায় তিনি রেঞ্জ কর্মকর্তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে টইটং এলাকায় রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশে টাকা তোলেন হাছানেরজুম এলাকার অলি আহমদ। টইটংয়ে বন বিভাগের জায়গায় পাকাঘর নির্মাণ, পাহাড় কাটা, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ নিয়মবহির্ভূত কাজ করতে হলে তাঁকে টাকা দিয়ে অলিখিত চুক্তি করতে হয়। এ টাকা তাঁর মাধ্যমে চলে যায় রেঞ্জ কর্মকর্তার হাতে।
টইটং, শিলখালী ও বারবাকিয়া এলাকা ঘুরে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা একাধিক ব্যক্তির নাম পেয়েছে সমকাল। তাদের মধ্যে রয়েছেন– গর্জনিয়াপাড়ার জামাল হোসেন, জুমপাড়ায় যুবদল নেতা আকতার হোসেন, সোলতান আহমদের ছেলে মৌলভী আলী হোসেন ও নুরুল আজিম, ফজুরমুরা এলাকায় মো. বাচ্চু ও মো. আলম, কেরনছড়ি এলাকায় মালদ্বীপপ্রবাসী নাসির উদ্দিন ও কাতারপ্রবাসী আহমদ শফি, চেপ্টামোরা এলাকায় লাইলা বেগম ও আবদুল মাজেদ, মধুখালী এলাকায় আবদুর রহিম ও লেদু মিয়া, চৌকিদারপাড়ায় সৌদিপ্রবাসী আবুল কাশেম, মৌলভীপাড়ায় সালাহ উদ্দিন ও মো. শাকের, দরগাহ মোড়া এলাকায় মো. শাহনেওয়াজ, আবদুল্লাহপাড়ার জাফর সওদাগর, হাছানেরজুম এলাকায় আবদুল হাকিম, ছনখোলারজুম ছালাম মার্কেটের পাশে মনোয়ারা বেগম, রমিজপাড়ায় আব্বাস উদ্দিন, নতুনপাড়ায় বাদশা মিয়া, খুইন্যাভিটায় শাহাব উদ্দিন, খলিফা মুরায় মো. শাহাবুদ্দিন, জারুলবনিয়া ঢালার মুখ এলাকায় মালয়েশিয়াপ্রবাসী আবদুল্লাহ, মাঝেরঘোনায় মৌলভী নুরুল কবির, খোকন মিস্ত্রি ও সৌদিপ্রবাসী বদিউল আলম, সবুজপাড়ায় গরু ব্যবসায়ী মনু মিয়া, রমিজ আহমদ, মো. আলমগীর ও জামাল হোসেন, তারাবনিয়াপাড়ার শাহ আলম, হোসাইনাবাদ এলাকায় মো. শওকত, ফাইন্যারচড়া এলাকায় কফিল উদ্দিন, বারবাকিয়া ভারুয়াখালী এলাকায় হেলাল উদ্দিন, আবুল কাশেম, ওমানপ্রবাসী ফয়জুল করিম ও কায়সার উদ্দিন। তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারা টাকা দিয়ে পাকাঘর নির্মাণের তথ্য স্বীকার করেছেন।
চৈতং বনকানন এলাকার জাকের হোসেন জানান, রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক তিন ইউনিয়নে এভাবে রাজত্ব কায়েম করলেও বন মামলার ভয়ে কেউ টুঁ শব্দ করার সাহস পান না।
অবশ্য টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে অলি আহমদ বলেন, আমি এসবে জড়িত নই। কারও কাছ থেকে কোনো সময় টাকা নিইনি। রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকা নেন কিনা আমার জানা নেই। আর হেডম্যান পরিচয়দানকারী জালাল আহমদের বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল নম্বরে কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক দাবি করেন, সংরক্ষিত বনে যারা বাড়িঘর তৈরি করেছিল অভিযান চালিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিয়েছেন। টাকা নেওয়ার অভিযাগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, যারা বাড়িঘর করেছে তাদের তালিকা দেন। বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজখবর নেব। প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- বন