ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বালুভরার দইয়ের জুড়ি নেই

বালুভরার দইয়ের জুড়ি নেই

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার হযরতপুর ঘোষপাড়ায় দই তৈরিতে ব্যস্ত গৃহবধূ সমকাল

 কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪ | ০০:৩৪ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ | ০৯:২৩

কোনো আচার-অনুষ্ঠান মানেই সেখানে ‘বালুভরার দই’ আছে। বড় অনুষ্ঠান থাকলে আগে থেকেই এই দই বায়না করে রাখা হয়। বালুভরার দইয়ের স্বাদ-গন্ধই আলাদা। একবার খেলে মুখে স্বাদ লেগে থাকে। তখন অন্য কোনো দই আর ভালো লাগে না। যে কোনো অনুষ্ঠানে পাতে এই দই না পড়লে যেন খাবারের আয়োজন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

নওগাঁ শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের হযরতপুর ঘোষপাড়ায় তৈরি দই ‘বালুভরার দই’ নামে পরিচিত। জেলার ঐতিহ্যবাহী এই দইয়ের স্বাদের গুণগান গাইতে কথাগুলো বলছিলেন চকবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা সাহেব আলী।

জেলার ছোট যমুনা নদীতীরের হযরতপুর ঘোষপাড়ার ৯০ শতাংশ মানুষের পেশা ছিল দুধ থেকে দই, ঘি ও ঘোল তৈরি। তাদের তৈরি দইয়ের সুনাম ছিল দেশ-বিদেশে। কালের বিবর্তনে গ্রামের অনেকে পেশা ছেড়েছেন, দেশ ছেড়েছেন। এই কাজে যুক্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে। তবে এখনও তাদের দইয়ের কদর আছে সবার কাছে। বর্তমানে প্রতি মণ দই ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দুই কেজি ওজনের দইয়ের পাত্র বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

হযরতপুর ঘোষপাড়ার গণেশ ঘোষ, সুরজিৎ ঘোষ ও সঞ্জিত ঘোষ জানান, ১৯৪০ সালে প্রথম তাদের দাদা ‘বালুভরার দই’ তৈরি করে বালুভরা ইউনিয়নের মধ্যে বিক্রি শুরু করেন। এর পর এই ব্যবসার হাল ধরেন তাদের বাবা-চাচারা; তার পর তারা। এখন তাদের দেখাদেখি দই তৈরি ও বিক্রির হাল ধরেছেন তাদের ছেলেরা। 

নীরেন ঘোষ, সুখেন ঘোষ ও সুজন ঘোষ বলেন, একসময় গ্রামের শতাধিক পরিবার দই, ঘোল ও ঘি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসবের ব্যবসাও ছিল অনেক ভালো। টাকার অভাবে এখন গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি পরিবার অনেক কষ্টে এই পেশা ধরে রেখেছে। সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিলে তারা ব্যবসাটিকে আবারও আগের জায়গায় নিতে পারতেন।

গোবিন্দ ঘোষ বলেন, বর্তমানে তারা চার ধরনের দই তৈরি করেন। মিষ্টি দই ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। দুধের সর দিয়ে বানানো ক্ষীর দইয়ের কেজি ৩০০ টাকা। কোনো ধরনের মিষ্টি ছাড়া বানানো দইয়ের কেজি ৩০০ টাকা এবং টক দই বিক্রি হয় ১৫০ টাকা কেজি দরে। গরম পড়লে দইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। গরম পড়ছে, তাই দোকানে বিক্রিও বেশি। সারা বছরই এই দইয়ের চাহিদা থাকে। 
বালুভরার দই মানুষের কেন এত জনপ্রিয়– জানতে চাইলে বিমান ঘোষ বলেন, বিশেষ টেকনিক কিছু তো আছেই; সেটা প্রকাশ করার নয়। কাজগুলো শুধু পরিবারের সদস্যরা জানেন। নওগাঁ ছাড়াও বালুভরার দই ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় যায়। কোনো মার্কেটে বা শহরে আমাদের কোনো বিক্রয় কেন্দ্র নেই। আমরা দই তৈরি করে নওগাঁ শহরের নামিদামি কিছু দোকানে সরবরাহ করি। তারা সেখানে তাদের নামে দইগুলো বেশি দামে বিক্রি করে। তবে আমরা ন্যায্যমূল্য পাই না।

বাবলু ঘোষ বলেন, বর্তমান বাজারে দুধ ও চিনির দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় আমরা দই, ঘোলের দাম বেশি চাইলে ক্রেতারা সহজে দিতে চান না। 
বিসিক শিল্পনগরীর নওগাঁ কার্যালয়ের কর্মকর্তা ওয়াসিম সরকার সমকালকে বলেন, এই পেশায় যারা যুক্ত আছেন, তারা চাইলে আমাদের এখান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারেন। এ ছাড়া দইয়ের মানোন্নয়নে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং বিপণনে তাদের সহযোগিতা করা হবে। 

 

আরও পড়ুন

×