ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

ছাত্রলীগ নেতার হাতে স্বর্ণ কারবারের নাটাই

ছাত্রলীগ নেতার হাতে স্বর্ণ কারবারের নাটাই

মোহাম্মদ আবু সাহেদ

 আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪ | ০১:১৫ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ | ০৮:২৮

ওরা ১১ জন। সবাই স্বর্ণবার চোরাচালান চক্রের সদস্য। এ দলের ‘অধিনায়ক’ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আবু সাহেদ। তিনি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে ছয় বছর চট্টগ্রাম-দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক পথে স্বর্ণবারের কারবার করেছেন নির্বিঘ্নে। ফটিকছড়ির ফতেহপুরের সাহেদ কখনও দুবাই, কখনও চট্টগ্রামে বসে নিয়ন্ত্রণ করেন স্বর্ণ পাচার। দুবাইয়ে থাকা সাহেদের ভাই লিটনও এ চক্রে বড় ভূমিকা রাখেন। সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বর্ণ কারবারে জড়িত ১১ সদস্যের মধ্যে সাহেদসহ আটজন বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম সিআইডির জালে ধরা পড়েন। তারা হলেন– চট্টগ্রাম নগরের শুলকবহরের হাজী আবদুল লতিফ রোডের বাসিন্দা রেজাউল করিম সিদ্দিক, ফটিকছড়ির ফতেহপুরের কোরবান আলী, পান্ডিপাড়ার হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও সাজ্জাদ হোসেন, ছাগলনাইয়ার উত্তর বাতিনিয়া এলাকার আবুল হোসেন ও চকরিয়ার উত্তর লক্ষ্যারচরের মো. রুবেল। তদন্তে সাহেদের বড় ভাই লিটনের নাম এলেও তাঁকে মামলার বাইরে রাখার জন্য চট্টগ্রাম সিআইডির এক শীর্ষ কর্তা কলকাঠি নাড়েন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেট্রো সিআইডির ইন্সপেক্টর সুমন শাহা সমকালকে বলেন, মূল হোতা সাহেদসহ আটজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

সাহেদের নাম যেভাবে সামনে এলো

চোরাচালান মামলায় গ্রেপ্তার আসামি হেলাল উদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে জানান, তিনি দুবাইয়ে ব্যবসা করতেন। তাঁর সঙ্গে ফটিকছড়ির ফতেহপুরের সাহেদের পরিচয় হয়। এর পর তিনি সাহেদের নেতৃত্বে স্বর্ণবার চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দুবাই থেকে দু’বার ৪০টি করে স্বর্ণবার বিশেষ কায়দায় সিটের নিচে করে দেশে আনেন। প্রতিবার স্বর্ণ আনার জন্য ৩০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ১৬০টি স্বর্ণবারসহ সাহেদের আরও তিন লোক দুবাই থেকে চট্টগ্রাম আসেন। বিমানের এক কর্মকর্তাসহ দুই সুইপার স্বর্ণবারগুলো বিমানবন্দরের ভেতর থেকে বাইরে এনে সাহেদের লোকের কাছে পৌঁছে দেন।

স্ত্রীর নারী নির্যাতন মামলায় আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন সাহেদ। স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে গত ২৬ জানুয়ারি সাহেদকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তাঁকে দু’দফা রিমান্ডে এনেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। 

২০২২ সালের ৩১ জুলাই ঘোষিত উত্তর জেলা ছাত্রলীগের ২৯ নম্বর সহসভাপতি এম এ সাহেদ। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন চৌধুরী তপু বলেন, সাহেদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি। সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা, আমাদের জানা নেই। চোরাচালানে তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এর আগে ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে ১৬০ পিস স্বর্ণবার পরিত্যক্ত উদ্ধার হয়। দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটের তিনটি সিটের নিচে কালো টেপ মোড়ানো আটটি প্যাকেটে সাড়ে ১০ কোটি টাকার ১৮ কেজি স্বর্ণবার ছিল। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর বিমানবন্দর কাস্টমের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা উক্যওয়ান মার্মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন। পতেঙ্গা থানা পুলিশ তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও পরে আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়।

আরও পড়ুন

×